Publish: Monday, 28 April, 2025, 4:28 PM

দেশের পাঁচ জেলায় বজ্রপাতে স্কুলছাত্র, শিক্ষক, কৃষকসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লায় চারজন, কিশোরগঞ্জে তিনজন, সুনামগঞ্জে একজন, হবিগঞ্জে একজন ও নেত্রকোণায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো তিনজন।
গতকাল রোববার (২৭ এপ্রিল) রাতে একটি ঘটনা ছাড়া বাকি সবাই সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কালবৈশাখী ঝড় ও শুস্ক আবহাওয়ায় বজ্রপাতে তাদের মৃত্যু হয়।
কুমিল্লা
কুমিল্লা জেলায় বজ্রপাতের পৃথক দুটি ঘটনায় দুই কৃষক ও দুই স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুরাদনগর উপজেলার কোরবানপুরে মাঠে কাজ করার সময় বজ্রপাতে দুই কৃষক ও বরুড়া উপজেলার হরিপুর পয়ালগুচ্ছ গ্রামে বজ্রপাতে দুই স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়।
নিহতরা হলেন- মুরাদনগরের কোরবানপুরের নিখিল দেবনাথ ও পাশের দেওরা গ্রামে জুয়েল ভূঁইয়া। বরুড়া উপজেলার হরিপুর পয়ালগুচ্ছ গ্রামের ফরহাদ হোসেন (১২) ও সাইমন হোসেন (১২)।
পুলিশ জানায়, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুরাদনগরের মাঠে কাজ করার সময় নিখিল দেবনাথ ও জুয়েল ভূঁইয়া ঘটনাস্থলেই মারা যান।
একই দিন দুপুরে পয়ালগুচ্ছ গ্রামের মাঠে ঘুড়ি উড়াতে যায় ওই দুই স্কুলছাত্র। এ সময় বজ্রপাতে দুজনই গুরুতর আহত হয়। স্থানীয়দের সহায়তায় বরুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
বরুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী নাজমুল হক ও বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নেত্রকোণা
নেত্রকোণার কলমাকান্দায় আকস্মিক বজ্রপাতে দিদারুল ইসলাম নামে এক কওমী মাদরাসার শিক্ষক ও মদনে আরাফাত মিয়া নামে এক মাদরাসার ছাত্র মারা গেছেন।
রোববার (২৮ এপ্রিল) রাত ১০ টার দিকে জেলার কলমাকান্দার খারনৈ ইউনিয়নে ধনুন্দ গ্রাম ও সোমবার (২৮ এপ্রিল) ভোর ৬টার দিকে মদন উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের তিয়শ্রী গ্রামে এসব ঘটনা ঘটে।
কলমাকান্দা থানার ওসি মুহাম্মদ ফিরোজ হোসেন বলেন, রোববার দিবাগত রাত ১০টার দিকে আকস্মিক বজ্রপাতে মারাত্মক আহত হোন মাদরাসা শিক্ষক দিদারুল। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
অপরদিকে জেলার মদনে মাদরাসায় যাওয়ার পথে বজ্রপাতে আরাফাত মিয়া (১০) নামের এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার ভোর সাড়ে ৬ টার দিকে মদন উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের তিয়শ্রী গ্রামে নিজ বাড়ির সামনেই বজ্রপাতে মৃত্যু হয় তার। আরাফাত উপজেলার তিয়শ্রী গ্রামের আব্দুস ছালামের ছেলে।
হবিগঞ্জ
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ ও বানিয়াচং এর হাওরে বজ্রপাতে এক কৃষক নিহত এবং তিনজন আহত হয়েছেন। সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকালে ঝড়বৃষ্টির সময় এই ঘটনা ঘটে।
জেলার ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আজাদুর রহমান জানান, সোমবার সকালে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হলে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার আড়িয়ামুগুর গ্রামের কালবাসী দাসশর ছেলে দূর্বাসা দাশ (৩৫) ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। আহত হয় তার ভাই ভূষণ দাশ (৩৪) ও বোন সুধন্য দাশ (২৮)।
এছাড়াও বজ্রপাতে বানিয়াচং উপজেলার বাগহাতা গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে বায়েজিদ মিয়া (১৩) আহত হয়।
সুনামগঞ্জ
শাল্লা উপজেলায় বজ্রপাতে রিমন তালুকদার নামের এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। সকালে উপজেলার আটগাঁও গ্রামের বুড়িগাঙ্গাল হাওরে এই ঘটনা ঘটে।
রিমন তালুকদার উপজেলার আটগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ও শাল্লা ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকালে গ্রামের পাশে বুড়িগাঙ্গাল হাওরে গরুকে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যান রিমন তালুকদার। এক পর্যায়ে বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত শুরু হয়। রিমন তালুকদার নিরাপদ স্থানে যাওয়ার আগেই বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এ সময় একটি গরুও বজ্রপাতে মারা যায়।
শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কিশোরগঞ্জ
কিশোরগঞ্জের হাওরে বজ্রপাতে এক নারীসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আজ সোমবার সকালে অষ্টগ্রাম ও মিঠামইন উপজেলার তিনটি হাওরে পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় তাদের মৃত্যু হয়।
নিহতরা হলেন- অষ্টগ্রাম উপজেলার কলমা ইউনিয়নের হালালপুর গ্রামের মৃত যতিন্দ দাসের ছেলে ইন্দ্রজিত দাস (৩০) ও খয়েরপুর আব্দুল্লাপুর ইউনিয়নের খয়েরপুর গ্রামের ইদ্রিস মিয়ার ছেলে স্বাধীন মিয়া (১৪) এবং মিঠামইন উপজেলার কেওয়ারজোর ইউনিয়নের রানীগঞ্জ গ্রামের মৃত আশ্রাব আলীর স্ত্রী ফুলেছা বেগম (৬০)।
অষ্টগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন জানান, ইন্দ্রজিত দাস সকাল ১০টার দিকে হালালপুর গ্রামের পাশে হাওরে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান। একই সময় স্বাধীন মিয়া খয়েরপুরের হাওরে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলে মারা যান।
মিঠামইন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অর্পণ বিশ্বাস জানান, আজ সকাল ৯টার দিকে মিঠামইন উপজেলার কেওয়ারজোর ইউনিয়নের রানীগঞ্জ গ্রামে বাড়ির পাশে ধান মাড়াইয়ের কাজ করার সময় ফুলেছা বেগম বজ্রপাতে মারা গেছেন।
ডার্ক টু হোপ/এসএইচ