পবিত্র ঈদুল আজহার আর মাত্র এক দিন বাকি। স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে এরই মধ্যে ঢাকা ছেড়েছে অধিকাংশ মানুষ। এখনও ঘুরমুখো মানুষের শ্রোত। এতে ফাঁকা হচ্ছে ঢাকা। নেই চিরচেনা যানজট, কোলাহল। ফাঁকা সড়কে সাই-সাই করে চলছে গাড়ি। এতে ভাড়ায় স্বস্তি মিলেছে ঈদে ঢাকায় রয়ে যাওয়া মানুষদের।
একদিন আগেও রাজধানীতে যে ভাড়ার মোটরসাইকেল ও সিএনজি অটোরিকশার চালকরা কয়েকগুণ বেশি টাকা চেয়েছিলেন, ফাঁকা ঢাকায় যাত্রীর অভাবে তারাই আজ বলছেন, ‘যা পারেন দিয়েন!’
বৃহস্পতিবার (০৫ জুন) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
রাজধানীর পল্টন, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ি, মালিবাগ, বাড্ডা এলাকায় দেখা যায়, নিত্যদিনে মতো যেখানে সেখানে নেই গাড়ির জটলা। ফাঁকা সড়কে দ্রুত গতিতে ছুটছে গাড়ি। তবে যেসব এলাকায় রাস্তার সাথে পশুর হাট বসেছে সেই এলাকায় কিছুটা যানজট দেখা গেছে।
এছাড়াও রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলো—যেমন ফার্মগেট, শাহবাগ, বাংলামোটর, বিজয় সরণি এই সময়গুলোতে সাধারণত যানজটে নাকাল থাকে। কিন্তু আজ দুপুরে এইসব এলাকাগুলোতে দেখা গেছে ব্যতিক্রমী চিত্র। সিগনালে কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষার পরই গাড়ি চলতে শুরু করছে। অনেক রাইডার ও প্রাইভেট কারচালকও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন।
যাত্রাবাড়ি বিমানবন্দর সড়কের বাসচালক আনোয়ার বলেন, ‘আজ সকাল থেকে রাস্তায় যানজট নেই। এখন আগের থেকে বেশি ট্রিপ মারা যায়। সড়কে এখন গাড়ি কম, তাই জ্যামও নাই। এক ঘণ্টার রাস্তা এক ঘণ্টাতেই শেষ হচ্ছে। যাত্রীদেরও কষ্ট কম। ঈদের সময় এমনটা হইলেই ভালো লাগে।’
আকাশ বাসের যাত্রী রাকিব বলেন, ‘আমার আগে পল্টন থেকে শাহাদাতপুর যেতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগত। এখন আধা ঘণ্টায় যাওয়া যাচ্ছে। ভালোই লাগতেছে।’
এদিকে সড়ক, রেল ও নৌপথে আজও ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। আগেরদিনই কেউ কেউ ঢাকা ছেড়েছেন, আজ সকাল থেকে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত মোট ১০টি ট্রেন ছেড়ে গেছে গন্তব্যের পথে। এর মধ্যে রয়েছে ৮টি আন্তঃনগর এবং দুটি লোকাল ট্রেন। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আজ সারা দিনে কমলাপুর থেকে মোট ৫৪টি ট্রেন ছাড়বে। এর মধ্যে রয়েছে একটি বিশেষ ঈদ স্পেশাল ট্রেনও।
সকাল পৌনে পাঁচটায় দিনের প্রথম ট্রেন বলাকা এক্সপ্রেস ময়মনসিংহের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। এরপর একে একে ছাড়ে অন্যান্য আন্তঃনগর ও লোকাল ট্রেন। এবারের ঈদযাত্রায় বেশিরভাগ যাত্রী আগেভাগেই অনলাইনে টিকিট কেটে যাত্রা করছেন, ফলে প্ল্যাটফর্মে ভিড় থাকলেও টিকিট কাউন্টারে তুলনামূলক চাপ নেই। তবে, অনলাইনে টিকিট না পেয়ে স্ট্যান্ডিং টিকিট কেটে রওনা দিতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে।
অনেক যাত্রী অভিযোগ করেছেন, স্ট্যান্ডিং টিকিট নেওয়ার পরও পর্যাপ্ত জায়গা বা দাঁড়ানোর সুযোগ না পাওয়ায় ছাদে উঠেছে অনেক যাত্রী। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ট্রেনের তেমন সিডিউল বিপর্যয়ের খবর পাওয়া যায়নি। সময়মতো ট্রেন ছাড়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেকে। ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন রাখতে স্টেশনজুড়ে রয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
রাজধানীর গাবতলী, যাত্রাবাড়ী ও মহাখালীসহ নানা জাগয়ায় সকালে বাসে যাত্রীদের চাপ বেশি ছিল। তবে দুপুর হতে হতে চাপ কমতে থাকে। কয়েক জায়গায় গাড়ি ছাড়তে কিছুটা বিলম্বের খবর পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে নগরবাসীর ঢাকা ছাড়াকে স্বস্তিদায়ক করতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল বেড়েছে। চালু আছে জরুরি নম্বরে সেবা। জরুরি ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
ডার্ক টু হোপ/এসএইচ