ঈদুল ফিতর মুসলমানদের বড় ধর্মীয় উৎসব। রমজানের রোজা শেষ হলেই আসে ঈদুল ফিতর। প্রাপ্তবয়ষ্ক সুস্থ মুসলিমের ওপর ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত নামাজ পড়া ওয়াজিব। শাওয়াল মাসের প্রথম দিন জোহর নামাজের সময় হওয়ার আগে এ নামাজ পড়তে হয়।
ঈদের নামাজের বিধান
ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত নামাজ পড়া ওয়াজিব। এ নামাজ খোলা জায়গা বা মসজিদে পড়া যায়। খোলা জায়গায় পড়া উত্তম। নামাজ অবশ্যই জামাতের সঙ্গে পড়তে হবে। জামাত ছাড়া ঈদের নামাজ আদায় করা যাবে না। এ নামাজ পড়তে আজান-ইকামত লাগে না। জুমার নামাজের মতো উচ্চ আওয়াজে কোরআন তেলাওয়াত করতে হয়। নামাজের পর খুতবা পাঠ করতে হয়। জুমার নামাজে খুতবা পড়া হয় নামাজের আগে।
ঈদের নামাজের নিয়ত
মনের ইচ্ছায় নিয়ত। যখন নামাজের জন্য জায়নামাজে দাঁড়ানো হয়, তখন মানুষের মাথায় থাকে, কোন ওয়াক্তের কোন নামাজ সে আদায় করছে। ঈদুল ফিতরের নামাজে দাঁড়ানোর সময় আমাদের স্মরণে থাকে, আমরা ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করছি—এই স্মরণটাই মূলত নিয়ত। এই নিয়তের সঙ্গে মনে রাখতে হবে, ‘ঈদের নামাজ ওয়াজিব এবং এ নামাজে ছয় তাকবির আছে।’এভাবে নিয়ত করা যায়, ‘আমি কেবলামুখী হয়ে ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ ছয় তাকবিরের সঙ্গে আদায়ের নিয়ত করছি।’ তারপর আল্লাহু আকবার বলে নামাজ শুরু করা। যারা বিশুদ্ধভাবে আরবি বলতে পারেন, তারা আরবিতেও নিয়ত করতে পারেন। আরবি নিয়ত করা আবশ্যকীয় নয়। আরবি নিয়তটি হলো—
বাংলা উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকাআতাইন সালাতিল ঈদিল ফিতরি মাআ সিত্তাতিত তাকবিরাতি ওয়াজিবুল্লাহি তাআলা ইকতাদাইতু বিহাজাল ইমামি মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।
বাংলা অর্থ: আমি ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ অতিরিক্ত ৬ তাকবিরের সঙ্গে এই ইমামের পেছনে কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য আদায় করছি আল্লাহু আকবার।
ঈদের নামাজের নিয়ম
প্রথম রাকাত
১. শুরুতে ঈদের নামাজে নিয়ত করে তাকবিরে তাহরিমা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হাত বাঁধবেন।
২. সানা পড়বেন। সানা হলো, সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তাআলা যাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।
৩. অতিরিক্ত তিন তাকবির দেবেন। এক তাকবির থেকে আরেক তাকবিরের মধ্যে তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় বিরত থাকতে হবে। প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবিরে উভয় হাত উঠিয়ে তা ছেড়ে দিতে হবে। তৃতীয় তাকবির দিয়ে উভয় হাত বেঁধে নেবেন।
৪. এরপর আউজুবিল্লাহ-বিসমিল্লাহ পড়বেন।
৫. সুরা ফাতিহা পড়ে অন্য একটি সুরা মেলাবেন।
অতঃপর নিয়মিত নামাজের মতো রুকু ও সিজদার মাধ্যমে প্রথম রাকাত শেষ করবেন।
দ্বিতীয় রাকাত
১. শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়ে সুরা ফাতিহা তেলাওয়াত করবেন।
২. যেকোনো একটি সুরা পড়বেন।
৩. সুরা মেলানোর পর অতিরিক্ত তিন তাকবির দিতে হবে। প্রথম রাকাতের মতো দুই তাকবিরে উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠিয়ে ছেড়ে দিতে হবে। অতঃপর তৃতীয় তাকবির দিয়ে হাত বাঁধবেন।
৪. তারপর রুকুর তাকবির দিয়ে রুকুতে যাবেন।
৫. সিজদা আদায় করে তাশাহহুদ, দুরুদ শরিফ, দোয়া মাসুরা পড়ে উভয় দিকে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ শেষ করবেন।
ঈদের দোয়া
রাসুলুল্লাহ (সা.) ঈদগাহে যাওয়ার সময় নিম্ন স্বরে তাকবির বা দোয়া পাঠ করতেন। তিনি এ দিন তাকবির পাঠ করতে করতে ঈদগাহের দিকে গমন করতেন। নামাজের আগ পর্যন্ত তিনি তাকবির পাঠ অব্যাহত রাখতেন। (সিল সিলাতুল আহাদিস আস-সহিহা, হাদিস: ১৭১)। তাকবিরটি হলো—
বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবর ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’
বাংলা অর্থ: আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আল্লাহ সবচেয়ে বড়। তিনি ছাড়া কোনো উপাসক নেই। আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আল্লাহ সবচেয়ে বড়। সকল প্রশংসা তাঁর।
ঈদের খুতবা
ঈদের নামাজের পর রাসুলুল্লাহ (সা.) খুতবা দিতেন। আবদুল্লাহ বিন সায়েব (রা.) বলেন, ‘ঈদে নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে আমি উপস্থিত হলাম। এরপর তিনি আমাদের নামাজ পড়িয়েছেন। অতঃপর তিনি বলেন, আমরা নামাজ শেষ করেছি। যার ইচ্ছা সে খুতবা শোনার জন্য বসবে , আর যে চলে যেতে চায়, সে চলে যাবে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস:১২৯৩)। ঈদের নামাজ পড়ার পর ইমাম খুতবা দেবেন আর মুসল্লিরা মনোযোগের সঙ্গে খুতবা শুনবেন।
ডার্ক টু হোপ/এসএইচ