পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাত্র ৫০ দশমিক ৮৯ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন জাতীয়তাবাদী ইউরোসংশয়বাদী রাজনীতিক কারোল নাভরোকি। রোববারের (১ জুন) রান-অফ ভোটের ফল সোমবার প্রকাশ করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী, উদারপন্থী ওয়ারশর মেয়র রাফাল ত্রাশকোভস্কি পেয়েছেন ৪৯ দশমিক ১১ শতাংশ ভোট।
নাভরোকির এই অল্প ব্যবধানের জয় পোল্যান্ডের সমাজে বিদ্যমান গভীর বিভক্তির প্রতিফলন বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। একদিকে ক্যাথলিক চার্চঘেঁষা রক্ষণশীলরা, অন্যদিকে নগরকেন্দ্রিক উদারপন্থীরা—এই দুই শিবিরের টানাপড়েন স্পষ্ট হয়েছে এবারের নির্বাচনে।
প্রধান বিরোধী দল ল অ্যান্ড জাস্টিস (পিস)-এর সমর্থনপুষ্ট নাভরোকি পূর্বসূরি আন্দ্রেজ দুদার পথ অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্কের সংস্কারমূলক এজেন্ডাকে প্রেসিডেন্ট ভেটোর মাধ্যমে বাধাগ্রস্ত করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। টাস্কের নেতৃত্বাধীন মধ্যপন্থী সরকার বিচার বিভাগ সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, যা পিস-শাসনামলে ইইউর সঙ্গে বড় ধরনের সংঘর্ষের জন্ম দিয়েছিল। ইইউর অভিযোগ, পিস বিচার ব্যবস্থাকে রাজনীতিকীকরণ করে।
এছাড়া গর্ভপাতের বিধিনিষেধ শিথিলকরণ ও এলজিবিটিকিউ অধিকারের প্রসারেও সরকারের উদ্যোগ ব্যাহত হয়েছিল সাবেক প্রেসিডেন্ট দুদার বিরোধিতার কারণে।
নাভরোকি তাঁর প্রচারণায় ব্রাসেলসের ‘অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ’ থেকে পোল্যান্ডের সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইউক্রেনের ইইউ ও ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্তির বিষয়েও তিনি সমালোচনামূলক অবস্থান নিয়েছেন, যদিও রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের যুদ্ধে তাঁর সমর্থন রয়েছে।
তবে তিনি স্পষ্ট করেছেন, ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের চেয়ে পোলিশ নাগরিকদের স্বার্থকেই তিনি অগ্রাধিকার দেবেন। বিশ্লেষকদের মতে, এ অবস্থান ইইউর সঙ্গে পোল্যান্ডের সম্পর্ক ও ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের জন্য সমর্থনে জটিলতা তৈরি করতে পারে।
ডানপন্থী রাজনীতিকদের মধ্যে নাভরোকির বিজয়ে উল্লাস দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনের আগে তাঁর প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছিলেন। অন্যদিকে রোমানিয়ায় জাতীয়তাবাদী প্রার্থী জর্জ সিমিওনের পরাজয়ের পর ইউরোপীয় ডানপন্থীরা যে হতাশায় ভুগছিলেন, তা অনেকটাই উবে গেছে নাভরোকির জয়ে।
পরাজয় মেনে নিয়ে নাভরোকিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাফাল ত্রাশকোভস্কি। তবে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, “এ জয় এক ধরনের দায়। এই কঠিন সময়ে, এই সামান্য ব্যবধানে পাওয়া বিজয় যেন পুরো জাতির প্রতিনিধিত্ব করে—তা ভুলে যেয়ো না।”
এদিকে ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লায়েন আশা প্রকাশ করেছেন, পোল্যান্ডের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। জার্মান প্রেসিডেন্ট স্টেইনমায়ার একে “গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের ভিত্তিতে” যৌথভাবে কাজ করার সুযোগ হিসেবে দেখছেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ‘ফলপ্রসূ সহযোগিতার’ প্রত্যাশা প্রকাশ করেছেন। ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে বলেছেন, “নাভরোকির সঙ্গে কাজ করে পোল্যান্ডকে আরও শক্তিশালী অংশীদার করা হবে।”
ফরাসি কট্টর-ডানপন্থী নেত্রী মেরিন ল্য পেন একে “ব্রাসেলসের কর্তৃত্ববাদী নীতির বিরুদ্ধে প্রত্যাখ্যান” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান এটিকে ‘জাতীয়তাবাদীদের দারুণ এক বিজয়’ বলে বর্ণনা করেছেন। রোমানিয়ার জর্জ সিমিওন লিখেছেন, “পোল্যান্ড জিতেছে।”
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা
ডার্ক টু হোপ/এসএইচ