ফুটবল নিয়ে মাঠের বাইরে যে উত্তাপ চলছিল, সেটা দেখা গেল মাঠেও। লম্বা সময় পরে জাতীয় স্টেডিয়ামে খেলতে নেমে দাপুটে ফুটবল উপহার দিল হামজা-জামালরা। দেখালেন বদলে যাওয়া ফুটবলের রূপ। গতি আর ক্ষিপ্রতায় ভুটানের বিপক্ষে মুহুর্মুহু আক্রমণ চালালো বাংলাদেশ। সফরকারীদের নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করে জয় তুলে নিল হাভিয়ের কাবরেরার দল। প্রস্তুতি সারলো সিঙ্গাপুর ম্যাচের।
আজ বুধবার (৪ জুন) আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে ঘরের মাঠে ভুটানের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। জাতীয় স্টেডিয়ামে সফরকারীদের ২-০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথমার্ধে হামজা চৌধুরী দলকে এগিয়ে নেওয়ার পরে দ্বিতীয়ার্ধে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন সোহেল রানা।
বাংলাদেশ ম্যাচে কেমন আধিপত্য বিস্তার করেছে সেটার প্রমাণ পাওয়া যায় পরিসংখ্যান দেখলেই। পুরো ম্যাচে ৬১ শতাংশ বল দখলে রেখে গোলের জন্য মোট ১৭টি শট নিয়েছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে লক্ষ্যে রাখতে পারে ছয়টি। বিপরীতে ৩৯ শতাংশ বল পায়ে রেখে পাঁচটি শট নিতে পারে ভুটান। লক্ষ্যে ছিল মোটে একটি।
ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছে বাংলাদেশ। বারবার দুই উইং ধরে আক্রমণে উঠে ভুটানের রক্ষণে ভীতি ছাড়িয়েছে জামাল-রাকিবরা। দাপুটে ফুটবল খেলায় বাংলাদেশকে ফল পেতে বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি। ম্যাচের পঞ্চম মিনিটে কর্নার পেয়ে যায় বাংলাদেশ। জামাল ভূঁইয়ার নেওয়া কর্নার থেকে লাফিয়ে উঠে দুর্দান্ত হেডে ভুটানের গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন হামজা চৌধুরী। ভুটানের গোলরক্ষক বলের লাইনে ঝাঁপিয়ে পড়লেও কিছুই করার ছিল না তার। বাংলাদেশের জার্সিতে হামজা চৌধুরীর এটিই প্রথম গোল।
এগিয়ে যাওয়ার পরও একই গতিতে খেলতে থাকে বাংলাদেশ। বেশ কয়েকটি আক্রমণ শাণায় জামাল-ফাহমিদুলরা। ম্যাচের ২৯তম মিনিটে বক্সের মধ্যে থেকে নেওয়া জামাল ভূঁইয়ার শট চলে যায় বাইরে দিয়ে। ৩২তম মিনিটে বাম উইংয়ে বল পেয়েছিলেন রাকিব হোসাইন। সেটাকে ক্লিয়ার করতে বক্স থেকে বেড়িয়ে গিয়ে মিস করেন ভুটানের গোলরক্ষক। বক্সে ক্রস বাড়ান রাকিব। কিন্তু সেটা রিসিভ করে ফাঁকা জালে পাঠানোর কেউ ছিল না।
এর দুই মিনিট পরে গোল প্রায় পেয়েই গিয়েছিল বাংলাদেশ। মাঠের ডানপ্রান্ত থেকে ক্রস বাড়ান তাজ উদ্দিন। সেটাকে রিসিভ করে ছয় গজ দূর থেকে বক্সে শট নেন জামাল ভূঁইয়া। কিন্তু জামালের সেই শট আটকে যায় ভুটানের এক ফুটবলারের গায়ে লেগে।
ম্যাচের ৪৩তম মিনিটে অবশ্য নিজেদের অর্ধে বল দেওয়া-নেওয়া করতে গিয়ে গোলমাল পাকিয়ে বসেছিলেন বাংলাদেশ। এরপর বল ক্লিয়ার করে সেটাকে বিপদ মুক্ত করেন তপু বর্মণ। ১-০ গোলের লিড নিয়ে বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।
সিঙ্গাপুর ম্যাচের আগে কোনো ঝুঁকি নিতে চাননি কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। যেকারণে দ্বিতীয়ার্ধে আর মাঠে নামাননি দুর্দান্ত খেলতে থাকা হামজা চৌধুরী আর জামাল ভূঁইয়াকে। জামালের পরিবর্তে মাঠে নেমেই ভীতি ছড়াতে থাকেন মোরসালিন।
৪৬ মিনিটে মোরসালিনের নেওয়া শট থেকে নেওয়া হেড লক্ষ্যে রাখতে পারেননি জামাল ভূঁইয়া। এক মিনিট পরেই ৬ গজ দূরে বক্সে থেকে মোরসালিনের নেওয়া শট ব্লক হয় ভুটানী ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে।
৪৯তম মিনিটে ব্যবধান বাড়ায় বাংলাদেশ। বক্সের মধ্যে থাকা বল এক ভুটানের ফুটবলার হেডে ক্লিয়ার করার চেষ্টা করেন। সেটা চলে যায় সোহেল রানার কাছে। বক্সের বাইরে পাওয়া বল দুরপাল্লার শট নেন অভিজ্ঞ এই মিডফিল্ডার। বল গিয়ে খুঁজে নেয় জাল।
৫১ মিনিটে থ্রুপাস থেকে বক্সের মধ্যে বল পেয়েছিলেন রাকিব। গোলরক্ষককে কাটিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু শেষ টাচটা জোড়ে হওয়ায় বলের আর নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেননি তিনি। বল চলে যায় গোল লাইনের বাইরে।
৫৫ মিনিটে ফাহমিদুলের পিন পয়েন্ট ক্রস ফিরিয়ে দেন ভুটানের গোলরক্ষক। ৬২তম মিনিটে বক্সের মধ্যে ফাঁকায় বল পেয়ে বুলেট গতির শট নেন মোরসালিন। কিন্তু দুর্দান্তভাবে সেটাকে ব্লক করেন ভুটানের এক ডিফেন্ডার। ফিরতি শটও ব্লক হয়ে ভুটানের আরেকজনের গায়ে লেগে।
ম্যাচের ৭২তম মিনিটে সেটপিস থেকে দুর্দান্ত এক শট নিয়েছিলেন ভুটানের ফুটবলার। তবে হাতের নিপুণ ছোঁয়ায় মিতুল মারমা সেটাকে বাইরে পাঠিয়ে দেন। বাকি সময়ে চেষ্টা করেও আর গোল আদায় করতে পারেনি কোনো দলই।
ম্যাচের প্রায় পুরো সময় জুড়েই ভুটানের গোলরক্ষককে ব্যস্ত রেখেছে বাংলাদেশ। বিপরীতে অলস সময় পার করেছেন বাংলাদেশের গোলরক্ষক মিতুল মারমা।
ডার্ক টু হোপ/এসএইচ