রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে একটি কেমিক্যাল গোডাউন ও গার্মেন্টস কারখানায় গত ১৪ অক্টোবর লাগা আগুন এখনো পুরোপুরি নিভেনি। সেখান থেকে এক ধরনের বিষাক্ত ধোঁয়া বা গ্যাস বের হচ্ছে। এটি মিশে যাচ্ছে বাতাসে ও পানিতে। এই গ্যাস শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এটা নিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
রূপনগরের শিয়ালবাড়ী এলাকার লন্ড্রি ব্যবসায়ী জামাল এ ব্যাপারে বলেন, ‘শুনলাম ফায়ারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হলো বিষাক্ত গ্যাস নাকি ছড়াচ্ছে। তাহলে তো বিষয়টি চিন্তার। আমি না হয় মুখে মাস্ক পরে কাজ করছি, কিন্তু অনেকে তো বিষয়টি জানেও না, বুঝবেও না।’
শিয়ালবাড়ী মোড়ের মাংস বিক্রেতা হুমায়ুন বলেন, ‘স্যারেরা তো কইতাছে মুখে মাস্ক লাগাইবার। কিন্তু কেউ তো কথা শুনতেছে না।’
এলাকাবাসী আশঙ্কা করছেন, পানিতে ধুয়ে কারখানা থেকে বের করে দেওয়া কেমিক্যালগুলো ময়লা পানির ড্রেনে বা সুয়ারেজ লাইনে পড়লেও ড্রেনের ফুটো দিয়ে তা খাবার পানির লাইনে ঢুকে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। ফলে বিষয়টি বিপজ্জনক হতে পারে।
এলাকাবাসীর এই আশঙ্কা ফেলে দেওয়ার মতো নয় বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম। তার মতে, ময়লার পানির ড্রেন থেকে খাবার পানির লাইনে ঢুকে পড়লে সেই পানি শরীরে লাগলে গা জ্বালাপোড়া করবে। অস্বস্তি তৈরি হবে। তা পান করলে শরীরের ভেতরে নানা সমস্যা দেখা দেবে।
এই কর্মকর্তা আরো বলেন, কারখানাটিতে আগুন নেভানোর জন্য পানি ছেটানো হচ্ছে, কিন্তু তা থেকে ধোঁয়ার মতো এক প্রকার গ্যাস ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে। এই গ্যাসে মূলত দুই প্রকার ক্ষতি হবে। প্রথমত কিছুদিন পর যাদের শরীরে এটি ঢুকেছে তারা শ্বাসকষ্টে ভুগতে পারেন। এছাড়া লিভার সমস্যা দেখা দিতে পারে। দ্বিতীয়ত এখন যে কেমিক্যালগুলো সরানো হচ্ছে, এগুলো পানিতে মিশে গেলে পানির মাধ্যমে দূষণ ছড়াবে। পরিবেশের জন্য যা ক্ষতিকর।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বলছেন, গোডাউনটির আগুন তারা নিয়ন্ত্রণে এনেছেন, কিন্তু পুরোপুরি নির্বাপণ এখনো করতে পারেননি। এ কারণে কেমিক্যাল তারা শুষ্ক অবস্থায় উদ্ধার করতে পারছেন না। ফলে সেগুলো পানিতে ধুয়ে বের করে দিতে হচ্ছে। এই পানি যেখানে যেখানে যাবে তার তেজস্ক্রিয়তা ছড়াবে। পানিতে গিয়ে পড়লে নাইট্রিক এসিডে রূপান্তর হবে। এই মুহূর্তে তারা গোডাউনটি থেকে অক্সিজেন সালফাইড সরাচ্ছেন। গত তিন দিনে কয়েক ধরনের কেমিক্যাল সরানো হয়েছে।
এদিকে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম বলেন, কেমিক্যাল গোডাউনে যে কেমিক্যাল রয়েছে, তার তেজস্ক্রিয়া অনেক ক্ষতিকর। তাই এই এলাকায় না থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
জানা গেছে, ফায়ার সার্ভিস অবৈধ প্রতিষ্ঠানের যে তালিকা করেছে, সেই তালিকায় শাহ আলম ট্রেডার্স নামের ওই রাসায়নিকের গুদামটিও ছিল। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থাকে জানানোর পাশাপাশি তিনবার ওই গুদামে নোটিশও দেওয়া হয়। এটি অভিযান চালানোর পর্যায়ে ছিল।
গত মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) লাগা আগুন পরদিন বুধবার (১৫ অক্টোবর) নিয়ন্ত্রণে আসে। এদিন বেলা ১১টা থেকে কেমিক্যাল সরানোর কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের কেমিক্যাল টিম। বুয়েটের বিশেষজ্ঞরাও ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছেন। তাদের ধারণা, কারখানাটির ভেতরে কয়েক ধরনের কেমিক্যাল মজুদ করা হয়েছিল। ফলে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও এখনো নির্বাপণ সম্ভব হয়নি।
ফায়ার সার্ভিসের একাধিক কর্মী এবং সেখানে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারীরা জানিয়েছেন, কারখানার আশপাশে গেলেই এক ধরনের ঝাঁজালো গন্ধ নাকে আসছে। কিছুক্ষণ পর নাক জ্বলতে শুরু করছে। তাদের সেখানে অবস্থান করা খুবই বিপজ্জনক। তারপরও তারা দায়িত্ব হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।
ডার্ক টু হোপ/এসএইচ