Publish: Thursday, 17 April, 2025, 7:45 PM

সংস্কার কমিশনের দেওয়া সংবিধান সংস্কারের জন্য প্রস্তাবিত ২৫টি সুপারিশে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে বিএনপি। এছাড়া আরও ২৫টি প্রস্তাবে দলটি আংশিকভাবে একমত হয়েছে। তবে বাকি প্রস্তাবগুলো নিয়ে রয়েছে তাদের দ্বিমত।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে এসব তথ্য জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি আরো জানান, আগামী রোববার আবারো সংস্কার ইস্যুতে সংলাপ হবে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংলাপে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার ও ড. ইফতেখারুজ্জামান।
আর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে সংলাপে অংশ নেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাঈল জবিউল্লাহ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও আবু মো. মনিরুজ্জামান খান।
সংলাপের সূচনা বক্তব্যে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে জাতীয় সনদ তৈরি করা। যাতে, বাংলাদেশে একটি স্থায়ী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে পারি।
তিনি বলেন, দেশে বারবার গণতন্ত্র হোঁচট খেয়েছে। আমরা বারবার দেখছি এ দেশে কেবল গণতন্ত্রই হোঁচট খেয়েছে তা নয়, ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্রও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো সংগ্রাম করেছে, বিএনপি অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেছে। এমন ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র যাতে আর না ফিরতে পারে এবং অতীতের মতো ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে, সেই জায়গাটাকেই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য এ প্রচেষ্টা।
তিনি আরো বলেন, বিএনপি সুনির্দিষ্ট মতামত দিয়েছে, ভিন্ন মত নিয়ে আলোচনা করতে চাই। গণতান্ত্রিক সংগ্রামে বিএনপির ভূমিকা দেশের মানুষ অবগত। তাদের ভূমিকা জনগণের কাছে প্রশংসনীয়।
প্রথম দিনের সংলাপ শেষে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংবিধান সংস্কার কমিশনের বিস্তারিত প্রতিবেদনে ১৩১টি প্রস্তাব থাকলেও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের স্প্রেডশিটে ৭০টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। আমাদের দফাওয়ারি আলোচনা চলছে। সংবিধানের প্রস্তাবনা হতে শুরু করে প্রজাতন্ত্র, রাষ্ট্রের মূলনীতিসহ সব বিষয়ে দফায় দফায় আলোচনা হচ্ছে। সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত সংস্কার কমিশনের ২৫টিতে একমত, ২৫টির মতো বিষয়ে আংশিকভাবে একমত হয়েছি। বাকী বিষয়গুলোতে একমত হতে পারিনি। আমরা যে সমস্ত বিষয়ে বিস্তারিত মতামত দিয়েছি, সে বিষয়ে কমিশনকে যৌক্তিকভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেছি। আমরা এই আলোচনা চলমান রাখতে চাই। আমরা বুঝাতে চাই, বিএনপি সংস্কারের বিষয়ে কতটা সিরিয়াস।
বিচারবিভাগের মতামত নিয়ে প্রতিবেদনে মিস লিড করা হয়েছে দাবি করে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিস্তারিত প্রতিবেদনের ১৫০টি মতামতের মধ্যে ৮৯টির বিষয়ে মতামত দিয়েছি, বাকীগুলোর অধিকাংশক্ষেত্রে একমত হওয়া বা মন্তব্যসহ একমত হওয়ার কথা জানিয়েছি।
তিনি বলেন, স্প্রেডশিট দিয়ে ওনারা আমাদের বিভ্রান্ত করেছেন। এটা দেওয়া উচিত হয়নি, স্প্রেডশিটে সংক্ষিপ্ত হ্যাঁ/না জবাব দেওয়ার জন্য যে কাগজগুলো দিলো তাতে করে অনেকটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। হ্যাঁ/ না তে মতামত চাওয়া বিষয়ের বিস্তারিত প্রতিবেদনের বিস্তর ফারাক আছে। সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুচ্ছেদের সংশোধনী ব্যতিরেখে বিচারক নিয়োগের অধ্যাদেশ জারি করা ততক্ষণ পর্যন্ত অসাংবিধানিক হবে যতক্ষণ পর্যন্ত তা সংবিধানে গৃহীত হচ্ছে। ১১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা সংবিধান সম্মত হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থাকবে। বিচার বিভাগ কর্তৃক সংবিধান লঙ্ঘন সমুচিত হবে না। তিনি আরো বলেন, বিএনপি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা চায়। তাই এই প্রক্রিয়া যাতে আইনানুগ ও সাংবিধানিক পদ্ধতিতে হয়, সেই জন্য মতামত দিয়েছি।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের অধিকাংশ সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত দাবি করে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, কিছু কিছু বিষয়ে তারা এমন প্রস্তাব দিয়েছেন, যা বাস্তবায়ন করলে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন সত্তা বজায় থাকবে না। তারপরও আমরা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আগাচ্ছি।
তিনি বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে বেশিরভাগই সংশোধনী দিয়েছে। এনআইডি, সীমানা নির্ধারণ নির্বাচন কমিশনের অধীনেই থাকা উচিত।
উল্লেখ্য, সংস্কার কমিশনগুলোর করা সুপারিশ চূড়ান্ত করতে গত ২০ মার্চ থেকে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। প্রথম বৈঠকটি হয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সঙ্গে। এ পর্যন্ত তারা ১১টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক শেষ করেছে। গত ২৩ মার্চ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে লিখিতভাবে মতামত জমা দেয় বিএনপি। এ পর্যন্ত ৩৫টি দল ও জোট লিখিত মতামত দিয়েছে।
ডার্ক টু হোপ/এসএইচ