Publish: Thursday, 17 April, 2025, 10:41 PM

ভারতে বিতর্কিত সংশোধিত ওয়াক্ফ আইন বাস্তবায়নে আপাতত বিরতি টেনেছে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্টে চলমান শুনানির একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ আইনটির কার্যকারিতা স্থগিতের আদেশ দেন।
এর আগে বুধবার থেকে সংশোধিত আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দাখিল হওয়া ৭৩টি পিটিশনের শুনানি শুরু হয়।
শুনানিতে সরকারকে আদালত জানায়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওয়াক্ফ বোর্ডে কোনো নতুন নিয়োগ কিংবা সম্পত্তির অবস্থা পরিবর্তন করা যাবে না। সেইসঙ্গে ‘ওয়াক্ফ বাই ইউজার’ ব্যবস্থার আওতায় থাকা পুরোনো সম্পত্তিও পূর্বাবস্থায় বহাল থাকবে। তবে আদালতের স্থগিতাদেশ সত্ত্বেও দেশজুড়ে আন্দোলন ও রাজনৈতিক উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে।
‘ওয়াক্ফ বাই ইউজার’ এমন এক রীতি, যেখানে প্রাচীনকাল থেকে ধর্মীয় উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত জমি ওয়াক্ফ হিসেবে গণ্য হয়, এমনকি লিখিত দলিল না থাকলেও। নতুন সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, বিরোধপূর্ণ কিংবা সরকারি জমি এই আইনের আওতায় পড়বে না।
প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না শুনানিতে বলেন, শত শত বছর আগে প্রতিষ্ঠিত মসজিদ বা ওয়াক্ফ সম্পত্তির কাগজপত্র পাওয়া কঠিন— এ বাস্তবতা উপেক্ষা করা যায় না। তিনি প্রশ্ন তোলেন, আদালতের রায়ে পূর্বে স্বীকৃত ওয়াক্ফ কি নতুন আইনের মাধ্যমে অকার্যকর হয়ে যাবে?
আইনজীবী কপিল সিবাল ও অভিষেক মনু সিংভি শুনানিতে জানান, ভারতের অন্তত আট লাখ ওয়াক্ফ সম্পত্তির মধ্যে প্রায় অর্ধেকই ‘ওয়াক্ফ বাই ইউজার’। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, নতুন আইন এ সম্পত্তিগুলোকে বিপদের মুখে ফেলতে পারে।
নতুন আইনে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য ওয়াক্ফ বোর্ডে অমুসলিম সদস্য রাখার বিধান রাখা হয়েছে, যা মুসলিম সম্প্রদায়ের মাঝে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। কেন্দ্রীয় ওয়াক্ফ কাউন্সিলে ২২ সদস্যের মধ্যে মাত্র ৮ জন মুসলিম এবং রাজ্য বোর্ডে ১১ জনের মধ্যে ৪ জন মুসলিম রাখা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি সরকারের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, "আপনারা কি হিন্দু দেবোত্তর বোর্ডে মুসলিম সদস্য রাখবেন?"— যা আদালতের উদ্বেগের গভীরতাই তুলে ধরে।
সরকারের পক্ষ থেকে আইনজীবী তুষার মেহতা জানান, বোর্ড ও কাউন্সিলে সদস্য নিয়োগ সংক্রান্ত ধারা ৯ ও ১৪ অনুসারে এখন কোনো নিয়োগ দেওয়া হবে না। পাশাপাশি আদালতের কাছে তিনি সরকারের জবাব দাখিলের জন্য এক সপ্তাহ সময় প্রার্থনা করেন, যা আদালত মঞ্জুর করে।
সুপ্রিম কোর্ট জানায়, ৭৩টি আবেদন থেকে ৫টি প্রাথমিকভাবে শুনানি হবে, বাকি আবেদনের নিষ্পত্তি সম্পন্ন হয়েছে ধরে নেওয়া হবে। আদালত আরও জানায়, তারা আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করবে না, তবে সংবিধান রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবে।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সংশোধিত ওয়াক্ফ আইনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে পুলিশের গুলিতে তিনজন বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর ঘটনায় পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
এ বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেস জানিয়েছে, রাজ্যে তারা এ আইন কার্যকর হতে দেবে না। তবে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক তোষণের অভিযোগ তুলেছে।
বিরোধী দল কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, ডিএমকে, সিপিআইসহ ধর্মীয় সংগঠন জমিয়তে উলামা-ই-হিন্দ ও অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডও এ আইনের বিরোধিতা করেছে। কেউ কেউ আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন, কেউবা শুধুমাত্র বাস্তবায়ন স্থগিতের অনুরোধ করেছেন।
সবশেষে, আদালত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে কেন্দ্র করে সিদ্ধান্ত নেবে— আদালতের রায়ে স্বীকৃত ওয়াক্ফ বাতিল হবে কিনা, বোর্ডে অমুসলিম সদস্য রাখার বৈধতা এবং বিতর্কিত জমিকে ওয়াক্ফ হিসেবে গণ্য করার সুযোগ থাকবে কি না।
ডার্ক টু হোপ/এসএইচ