গাজীপুরের শ্রীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা চৌরাস্তায় ইজারাদার ও হকারদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে।
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টার দিকে শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত মাওনা চৌরাস্তায় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় ৩ জনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তারা ইজারাদর কাজল ফকির এবং সেলিমের পক্ষের লোক বলে দাবী করেন। আহত অন্যান্যরা স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাওনা চৌরাস্তা উড়াল সেতুর নিচে ছোটবড় একাধিক অস্থায়ী ব্যবসায়ীরা বলেন, আমরা দুপুরের পর থেকে দোকান খুলে বসি। অনেকে সকাল থেকেই ব্যবসা শুরু করে। কেউ কেউ বিকেল ৪টার পর থেকে ব্যবসা শুরু করে। অনেক ব্যবসায়ী ভ্যান গাড়ির উওর মালামাল রেখে ব্যবসা করছে, কেউ কেউ দাঁড়িয়ে মুড়ি বা চানচুর বিক্রি করছে। যারা স্থায়ীভাবে নিয়মিত দোকান খুলে বসছে তাদের কাছ থেকে ইজারাদাররা ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্তও নিরাপত্তা চুক্তি (অ্যডভান্স) নিয়েছে। পৌরসভা থেকে যারা ইজারা পেয়েছে তারা আমাদের ছোটবড় প্রত্যেক দোকান থেকে প্রতিদিন ১০০ টাকা করে ইজারা তুলছে। প্রতিবাদ করলেই দোকান উচ্ছেদের হুমকি দেয়। সারাদিন ছোটখাটো দোকানে বিক্রি করে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হয়। তা থেকে ইজারাদারকে ১০০ টাকা দিয়ে দিলে আর থাকেই বা কতো? আমরা পেটের দায়ে তাদেরকে ১০০ টাকা দিতে বাধ্য হয়েছি। আগে আমাদের কাছ থেকে ২০ থেকে ৫০ টাকা করে ইজারা নিয়েছে। চলতি বৈশাখের শুরু থেকে প্রতি দোকান থেকে ১০০ টাকা করে ইজারা নিচ্ছে, যা সম্পূর্ণ জুলুম।
ইজারাদর কাজল ফকির বলেন, পৌরসভার দরপত্রের মাধ্যেমে আমি চৌরাস্তা বাজার ইজারা পায়। পহেলা বৈশাখ থেকে আমি নিয়মিত ইজারা উঠাচ্ছি। আওয়ামী লীগের আমলে একটি হকার্স কমিটি করা হয়েছিল। সেই কমিটির জাহিদ ও সাধারণ সম্পাদক কয়েকজন হকার নিয়ে আমাদের পক্ষের লোকদের ওপর হঠাৎ করে হামলা করে আহত করে। হামলাকারীরা আমাদের লোকদের (যারা ইজারা উঠায়) কাছ থেকে টাকা লুটে নেয়। হামলাকারীরা পূর্ব থেকেই হামলা করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিল। বিষয়টি আমরা জানতাম না। আমাদের লোকজন ইজারা ওঠানোর সময় হঠাৎ করে হকারদের মিছিল থেকে হামলা করে। তাদের হামলায় আমাদের ২০ জন আহত হয়েছে।
বৈধভাবে শ্রীপুর পৌরসভা থেকে মাওনা চৌরাস্তা অস্থায়ী বাজার থেকে ইজারা নিয়েছেন বলে দাবি করেন শ্রমিকদলের বহিষ্কৃত নেতা কাজল ফকির ও সেলিম।
এ বিষয়ে জাহিদ বলেন, মাওনা চৌরাস্তায় হকারদের কাছ থেকে অব্যাহত চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন শ্রীপুর উপজেলা শাখার উদ্যোগে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই প্রতিবাদের জেরে কাজল ফকির এবং সেলিম মিয়া দেড় থেকে দুই’শ সশস্ত্র লোকজন নিয়ে হকারদের ওপর হামলা করে। তারা আমাকে এবং হকার্স কমিটির সভাপতি মামুন মিয়ার মাথায় কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এবং শ্রীপুর পৌরসভার প্রশাসক ব্যারিস্টার সজীব আহমেদ কাছে সড়ক ও জনপথের জায়গা পৌরসভা ইজারা দিতে পারে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিগত ২৩ বছর যাবত মাওনা চৌরাস্তায় অস্থায়ী বাজার হিসেবে ইজারা দিয়ে আসছে। শিডিউলভুক্ত বাজার ইজারা না দিলে আগে শিডিউল বাতিল করতে হবে। বাতিল যেহেতু হয়নি, তাহলে তালিকাভুক্ত বাজার ইজারা না হলে সেই টাকা যিনি ইজারা দেননি তাকে ব্যাক্তিগত দায় থেকে সেই টাকা দিতে হবে। ছোটবড় সকল বিট থেকে প্রতি তিন ঘন্টার জন্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী টাকা ওঠানোর জন্য ইজারাদারদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পূর্বে দলীয় সরকার ছিল এবং পৌরসভার দলীয় প্রতিনিধি মেয়র ছিল। তারা যদি বিষয়টি ভুল করে থাকে তাহলে আপনিও কি ভুল করবেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা কি তাহলে বাজার উচ্ছেদ করতে পারছি বা বাজার উচ্ছেদ করা হয়েছে? আমার শিডিউলভুক্ত বাজার আমি ইজারা দিব যতক্ষণ না পর্যন্ত উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাকে শিডিউল বাতিলের বা শিডিউল সংশোধনের আদেশ না দেয়, অথবা আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো আদেশ পাই।
জনগুরুত্বপূর্ণ জায়গা হিসেবে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা চৌরাস্তার ইজারা বাতিল করা যায় কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি আগামী মাসে আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে বিয়টি উপস্থাপন করব। আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে উপস্থিত সবাই একমত থাকলে জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা বা পরামর্শে বাজার ইজারা স্থগিত করা হবে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মন্ডল বলেন, ইজারাদার এবং হকারদের মদ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ৩ জনকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
ডার্ক টু হোপ/এসএইচ