Publish: Monday, 1 September, 2025, 10:35 AM

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ও পার্শ্ববর্তী জোবরা গ্রামে শিক্ষার্থীদের ওপর সংঘবদ্ধ হামলায় রক্তাক্ত হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। শনিবার (৩০ আগস্ট) রাত থেকে রোববার (৩১ আগস্ট) বিকেল পর্যন্ত টানা দফায় দফায় সহিংসতায় আহত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই উপ-উপাচার্য, প্রক্টর ও নিরাপত্তা শাখার বেশ কয়েকজন সদস্যও আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে এবং সেনাবাহিনী অভিযান শুরু করেছে।
ঘটনার সূত্রপাত হয় শনিবার রাত ১১টার দিকে, যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকার এক ভবনে ভাড়াটিয়া শিক্ষার্থী সুফিয়া খাতুন দারোয়ানের হাতে মারধরের শিকার হন। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে শিক্ষার্থীরা জড়ো হলে জোবরা গ্রামে মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়—“শিক্ষার্থীরা হামলা করতে এসেছে, সবাই দা-কিরিচ নিয়ে বের হন।” মুহূর্তেই কয়েকশ স্থানীয় বাসিন্দা শিক্ষার্থীদের মেস ও আবাসিকে হামলে পড়ে।
হামলায় অনেক শিক্ষার্থীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, কয়েকজনকে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আহতদের মধ্যে অন্তত ৫০ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, যাদের অনেকে আইসিইউতে রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. টিপু সুলতান জানান, অনেকের শরীরে গভীর কোপের চিহ্ন রয়েছে এবং ৪০ জনের বেশি শিক্ষার্থীকে সেলাই দিতে হয়েছে।
হামলার শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন, উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. শামীম উদ্দিন খান, প্রক্টর ড. তানভীর হায়দার আরিফসহ অনেক কর্মকর্তা। হামলাকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক গাড়িসহ বেশ কিছু ভবন ও যানবাহন ভাঙচুরও চালায়।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে, স্থানীয় সন্ত্রাসীরা বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতাদের সহযোগিতায় এ হামলা চালিয়েছে। অপরদিকে স্থানীয় এক বিএনপি নেতার উসকানির অভিযোগও ওঠে। পরে বিএনপি এক বিবৃতিতে জানায়, অভিযুক্ত ওই নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক কামাল উদ্দিন এ ঘটনাকে “পরিকল্পিত গণহত্যার চেষ্টা” বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, “ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেতারা হেলমেট পরে রামদা ও কিরিচ নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলে পড়ে। প্রশাসনকে বারবার জানানো হলেও তারা তৎপর হয়নি।”
অতীতেও জোবরা গ্রাম শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার জন্য কুখ্যাত। ২০১০ সালে এখানকার সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হয়েছিলেন অ্যাকাউন্টিং বিভাগের ছাত্র আসাদুজ্জামান। ২০২৪ সালের আগস্ট ও অক্টোবরে একই ধরনের হামলার ঘটনা ঘটে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রোববার সব ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করে। সেনাবাহিনী ক্যাম্পাস ও আশপাশে টহল শুরু করেছে। তবে এখনো পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো গ্রেপ্তার হয়নি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অতীতের মতো এবারও যদি হামলাকারীদের বিচার না হয়, তবে এর পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে।
ডার্ক টু হোপ/এসএইচ