শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫,
১২ বৈশাখ ১৪৩২
বাংলা English हिन्दी

শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫
জাতীয়
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির এক যুগ: সাক্ষ্যগ্রহণে আটকে আছে বিচার
অনলাইন ডেস্ক
Publish: Thursday, 24 April, 2025, 9:29 AM

দেশের ইতিহাসে সাভারের রানা প্লাজা ধস একটি বড় ধরনের ট্র্যাজেডি। এই ঘটনা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে নাড়া দিয়েছিল বিশ্বকেও। ২০১৩ সালের আজকের দিনে (২৪ এপ্রিল) আট তলা ভবনের ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে প্রাণ হারান ১ হাজার ১৩৬ জন শ্রমিক। আহত ও পঙ্গু হন প্রায় দুই হাজার জন। মর্মান্তিক এ ঘটনার এক যুগ পেরিয়ে গেলেও এখনও শেষ হয়নি বিচার। তিন বছর আগে শুরু হওয়া সাক্ষ্যর ৫ ভাগের একভাগও শেষ হয়নি। কবে নাগাদ শেষ হবে তাও বলতে পারছেন না রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টরা। ক্ষতিগ্রস্ত ও আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসনসহ দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন স্বজন ও শ্রমিক সংগঠনগুলো।

ভবন ধসে বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় ওই সময় মোট চারটি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে অবহেলার কারণে মৃত্যু উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করে পুলিশ। ইমারত নির্মাণ আইন না মেনে ভবন নির্মাণ করায় আরও একটি মামলা করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং ভবন নির্মাণে দুর্নীতি ও সম্পদের তথ্য গোপন সংক্রান্ত দুটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে কেবল দুদকের দায়ের করা সম্পদের তথ্য গোপনের মামলাটি নিষ্পত্তি হয়েছে। এর বাইরে ভবন নির্মাণে দুর্নীতির মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে। বাকি দুটি মামলা সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে আটকে আছে।

সর্বশেষ গত ১৫ এপ্রিল হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। তবে ওই দিন সাক্ষী না আসায় মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১৯ মে দিন ধার্য করেন আদালত। একইসঙ্গে ১৭ জন সাক্ষীকে হাজির হতে সমন জারি করেন আদালত। আলোচিত এ মামলায় ৫৯৪ সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন ৯৪ জন। গত ১২ ফেব্রুয়ারি নুরুজ্জামান দোলন নামে একজন সাক্ষ্য দেন।

এক যুগ আগে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ১ হাজার ১১৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ১৯ জন মারা যান। ধ্বংসস্তূপ থেকে ২ হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার হয়। উদ্ধারকৃত লাশের মধ্যে ৮৪৪টি স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা রেখে ২৯১ জনের অশনাক্ত লাশ জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়। উদ্ধারকৃত জীবিতদের মধ্যে ১ হাজার ৫২৪ জন আহত হন। তাদের মধ্যে পঙ্গুত্ব বরণ করেন ৭৮ জন।

ভবন ধসের এ ঘটনায় প্রথমে ‘অবহেলা ও ত্রুটিজনিত হত্যা’র অভিযোগে একটি মামলা করেন সাভার থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওয়ালী আশরাফ। ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয় কৃষ্ণ কর ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে এই মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে রানার বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়। ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এস এম কুদ্দুস জামান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। এরপর ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়। রানা প্লাজা ধস হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ৪১ আসামির মধ্যে বর্তমানে কারাগারে আছেন শুধুমাত্র ভবনের মালিক সোহেল রানা। আসামিদের মধ্যে সোহেল রানার বাবা আব্দুল খালেক, আবু বক্কর সিদ্দিক ও আবুল হোসেন মারা গেছেন। বাকিরা জামিনে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী মাসুদ খান খোকন।

মামলার বিচার কাজের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘প্রায় ছয় বছর উচ্চ আদালতের আদেশে এ মামলার বিচারকাজ স্থগিত ছিল। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হওয়ার পর ৯৪ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। সাক্ষী হাজির করতে ১৭ জনের বিরুদ্ধের সমন ইস্যু করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই মামলাটি যুক্তিতর্কের পর্যায়ে নেওয়া হবে। চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি নুরুজ্জামান দোলন নামে একজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১৯ মে দিন ধার্য রয়েছে।’

মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের এই কৌঁসুলি বলেন, ‘দীর্ঘ সময় আমরা এই মামলার দায়িত্বে ছিলাম না। ওই সময় যারা দায়িত্বে ছিলেন তারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে আমরা ধারণা করছি তাদের অবহেলার কারণেই মামলার দীর্ঘসূত্রিতা হয়েছে। আমরা দায়িত্ব পাওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। সাক্ষীদের হাজির হতে সমন জারি করেছি। আমরা দ্রুত সময়ে বিচার শেষ করার চেষ্টা করছি।’

এ বিষয়ে আসামি সোহেল রানার আইনজীবী মাসুদ খান খোকন বলেন, ‘এ মামলায় রানার প্রতি অবিচার করা হচ্ছে। দীর্ঘ ১২ বছর কারাগারে রয়েছেন তিনি। এই যে এতগুলো বছর তার জীবন থেকে চলে গেলো, যদি তিনি খালাস পান কে তাকে এই সময়গুলো ফিরিয়ে দেবে। রানা প্লাজার ভবন ধস নিছক একটি দুর্ঘটনা। তাছাড়া ভবনটির প্রকৃত মালিক সোহেল রানা নয়, তার বাবা আব্দুল খালেক। এখানে রানার কোনও হাত নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিগত সরকার আদালতে সাক্ষী হাজির করতে তেমন সচেষ্ট হয়নি। তবে বর্তমান সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে গুরুত্ব দিয়ে আদালতে সাক্ষী হাজির করছে। দেরিতে হলেও মামলাটি আলোর মুখ দেখছে।’

এ মামলায় বিচার বিলম্বিত হওয়ার জন্য কাউকে দায়ী করছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে রানার এই আইনজীবী বলেন, ‘কারও গাফিলতি আছে বলা যাবে না। বিগত সরকার সাক্ষী আনতে পারেনি, এই সরকার পারছে। আসামিপক্ষের একটাই প্রত্যাশা, সাক্ষী আসুক। আইনের ভাষায় একটি কথা আছে, বিলম্ব ন্যায় পরায়ণতা ব্যাহত করে। বিলম্বের কারণেই রানা জেলে আছে। আমরা আশা করছি বিচারে রানা খালাস পাবে।’

ডার্ক টু হোপ/এসএইচ
মতামত লিখুন:
https://www.darktohope.org/ad/1731844310_left-banner.gif

সর্বশেষ সংবাদ

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফর স্থগিত
এবার পাকিস্তানিদের সব ধরনের ভিসা স্থগিত করলো ভারত
শাকিব ভাই আমাকে ভীষণ হেল্প করেছিলেন : শখ
দেশে ৩০ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হতে পারে: বিশ্বব্যাংক
‘বিশ্বের শীর্ষ উৎপাদনকারী দেশগুলোর একটি হতে চায় বাংলাদেশ’
জাতীয়- এর আরো খবর
Email: darktohope@gmail.com
© 2024 Dark to Hope
🔝