বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫,
১০ মাঘ ১৪৩১
বাংলা English हिन्दी

বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫
মতামত
এক ফোঁটা খেঁজুরের গুড় – ধ্বংস মানব সভ্যতা
অশ্রু হাসি
Publish: Sunday, 1 December, 2024, 4:09 AM
দেশটার কি হয়ে গেল, আমরাতো ভালই ছিলাম। এখন যেদিকে তাকাই বিচার বিভাগ, পুলিশ, প্রশাসন, শিক্ষক, শ্রমজীবী মানুষ, ছাত্র-ছাত্রী মনে হয় সবাই আতঙ্কিত। গ্রাম থেকে শহরের সব মানুষ ভয়ে আর চরম অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে নিঃশ্বাস বন্ধ হয় যাওয়ার এই সময়ে কিছু লিখতে গিয়ে একটা গল্পের কথা মনে হল- তাই আজকের লেখাটা গল্প দিয়ে শেষ করার সিদ্ধান্তে গল্পটা উপস্থাপন করলাম।

একটি এলাকার মানুষ দীর্ঘ দারিদ্রতা,অন্যায় অবিচার, সামগ্রিক ভাবে পর্যদস্ত অবস্থা থেকে অনেক সমস্যা কাটিয়ে সর্বসাকুল্যে অতীতের তুলনায় অনেক ভাল অবস্থায় যখন পৌছালো, এর মধ্যে ভিনদেশে বসবাস করা একজন বড় মাপের হুজুরের সাথে শয়তানের দেখা হল। হুজুর শয়তানকে জিজ্ঞাসা করল, আচ্ছা তুমি দাবি করো সারা পৃথিবীর সকল ধ্বংস-ক্ষয়ক্ষতি তোমার কারণে হয়- এটা কি আমার বিশ্বাস করা উচিত হবে? শয়তান বললেন জ্বি হুজুর সব আমি একাই করি,‘আল্লাহ সেই ক্ষমতা দিয়েছেন’। তখন হুজুর বললেন তাহলে তাকে কিছু একটা নমুনা দেখাও। তখন শয়তান বলল হুজুর এখন আমি খুব ব্যস্ত- আপনি আগামী বৃহস্পতিবার এখানে এসে একটু বসেন, তখন দেখাবো, কিভাবে কাজ করে। বৃহস্পতিবার যথা সময় এসে হুজুর নির্ধারিত স্থানে এসে শয়তানের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু সময় পার হতে হতে প্রায় এক ঘন্টা অতিক্রম হওয়ার পর হুজুর ভাবলেন শয়তান হয়তো তাকে ধোঁকা দিয়েছে- আসলে সে আসবে না। মনে মনে ভাবলেন- শয়তানের কাজই তো হলো ধোঁকা দেওয়া, এটাও তার একটা কাজ এমন ভাবতে ভাবতে কিছু কেনাকাটা করার জন্য পাশের হাটের দিকে রওনা হলেন- তাৎক্ষণিক শয়তান উপস্থিত হয়ে বলল চলেন চলেন,আমার একটু দেরি হয়ে গেছে একা অনেক কাজ করতে হয়তো। হুজুর বললেন থাক এখন দেখাও তোমার কর্ম। শয়তান হুজুরের হাত ধরে দ্রুত গ্রামের বাজারের ভিতরে টেনে নিয়ে একটি খেজুরের গুড়ের দোকানে গিয়ে, খেজুরের গুড়ের জারের ভিতর আঙ্গুল দিয়ে, একটু গুড় নিয়ে দাম জিজ্ঞাসা করে- আঙ্গুলে নেওয়া গুড় পাশের একটা বাঁশের পিলারের মধ্যে মুছে দিয়ে হুজুরকে বলল, হুজুর এবার আপনি দেখেন আমার কাজ শেষ বলে, শয়তান দ্রুত চলে গেল। হুজুর হতাশ হয়ে ভাবল শয়তান তাকে একটা কিছু দেখানোর পরিবর্তে ধোঁকা দিয়েছে। হুজুর মন খারাপ করে নিজের নির্ধারিত বাজার করতে অন্য দোকানে চলে গেলেন। যেহেতু সময়টা ব্রিটিশ শাসন আমলের,একজন ইংরেজি সাহেব তার কুকুর নিয়ে খেজুরের গুড় ক্রয় করতে ঐ গুড়ের দোকানে আসলো এবং তখন ঐ সময় বাঁশের পিলারে লাগানো  খেজুরের গুড় খাওয়ার জন্য পিঁপড়া আসলো, পিঁপড়াকে আক্রমন করার জন্য টিকটিকি আসলো আর টিকটিকির চক্ষু রাঙানি ও লেজ নাড়ানো দেখে ওই পাশ দিয়ে যাওয়া একটা বিড়াল ভাবল তাকে টিকটিকি চক্ষু রাঙাচ্ছে এই জন্য বিড়ালটি ক্ষেপে খাপটি মেরে টিকটিকিকে আক্রমণের  জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এই অবস্থায় ব্রিটিশ সাহেবের কুকুর ভাবল বিড়ালের এত সাহস, বিড়াল তাকে মেজাজ দেখায় এই অবস্থায় কুকুর আর অপেক্ষা না করে বিড়ালের উপর ঝাঁপ দিতে গিয়ে আশেপাশের কয়েকজন মানুষের গায়ে কুকুরের আঁচল লাগলো। তাতে মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে কুকুরকে লাঠি দিয়ে পেটাতে আরম্ভ করল, কুকুরকে বাঁচাতে গিয়ে ইংরেজি সাহেবের মাথা ফেটে গেল। তখন তিনি পাশের বৃটিশ সেনা ক্যাম্পে গিয়ে তার মাথা ফাটিয়ে দেওয়া ও পিটিয়ে কুকুরে হত্যার অভিযোগ করলে সেনারা এসে বাজারের মানুষজনকে এলোপাথাড়ি পিটাতে লাগলো এতে বহু মানুষ আহত হলো এবং বাজারে লুটপাট এবং ভাঙচুর হলো। সমস্ত বাজার বন্ধ হয়ে গেল। বাজার থেকে গিয়ে গ্রামের মানুষ চেয়ারম্যান সাহেবের নেতৃত্বে সভায় বসলেন কিভাবে কি করা যায় তার জন্য। চেয়ারম্যান সাহেব বললেন কয়েকটা দিন যাক সবাই একটু শান্ত হন, আলোচনা করে সমস্যার একটা শান্তিপূর্ণ সমাধান বের করা যাবে। কিন্তু সেখানে উপস্থিত তরুণ প্রজন্মের বেশ কিছু ছাত্র যুবক বলল, এটা মানা যায় না। এদের বিরুদ্ধে এখনই কঠিন ব্যবস্থা নিতে হবে। কিছু মুরুব্বী চেয়ারম্যানের নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল,তারা বললেন,ছাত্র যুবকরাই ঠিক। আমাদের সবারই বয়স হয়ে গেছে, ছাত্র যুবকদেরকে দায়িত্ব দিতে হবে। তাদেরকেই তাদের ভবিষ্যৎ তৈরি করার সুযোগ দিতে হবে। তখন চেয়ারম্যান সাহেব অসহায় হয়ে গেলেন। শহর থেকে আসা কিছু শিক্ষিত লোক আর চেয়ারম্যানের বিরোধীরা এক হয়ে মামলা করা এবং ব্রিটিশ সাহেবদেরকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য মিছিল মিটিং করে এলাকা সরগম অবস্থা করে রাখলেন। এর মধ্যে ছাত্ররা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস বর্জন হেডমাস্টার বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যারা ছাত্র যুবকদের কথা মতো চলবেনা তাদেরকে জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করতে লাগলেন। এলাকায় দরবার কারবার চেয়ারম্যান মুরব্বিদের বাদ দিয়ে নিজেরা যে কোন সিন্ধান্ত দেওয়া আরম্ভ করল। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সবাই সংঘবদ্ধ হয়ে ছাত্র যুবকদেরকে দিয়ে সব কাজ আরম্ভ করলো। বিভিন্ন মুরুব্বিদেরকে অপমান করাসহ প্রতিদিন এলাকায় নতুন নতুন সমস্যা সৃষ্টি হতে লাগলো।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যে মামলা করা হলো। এখন মামলার খরচ সংগ্রহের জন্য সবারই চাঁদা ধরা হলো,মামলার খরচ যা লাগবে কেউ ছেলের পড়ার খরচের জন্য টাকা যেটা ছিল, তা মামলার জন্য দিয়ে দিতে হলো, কেউ মেয়ের বিবাহের জন্য যে টাকা রেখেছিল তা মামলার জন্য দিতে হল, আরও বিভিন্ন যে টাকার রাখা ছিল তাও মামলার কাজে খরচ হয়ে গেল। মামলার কারণে ছেলেদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গিয়ে ছেলেরা বখাটে হয়ে মাদক সেবন সহ চুরি-চামারি আরম্ভ করলো। এই অবস্থায় অনেক ছেলে মেয়ে নষ্ট হয়ে গেল এবং ছেলেদের কারণে সবারই মধ্যে দ্বন্দ্ব বিবাদ মারামারি খুনাখুনি প্রতিদিন বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে নিজেদের মধ্যে বিনা কারণে বিবাদ, আহতদের চিকিৎসার জন্য নতুন করে চাঁদা, এতে প্রতিদিন নতুন সমস্য আরম্ভ হল। তাদের এরকম হটকারি সিদ্ধান্তের জন্য আজকে সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে একথা বলে তাদেরকে চেয়ারম্যানের দালাল বলে মারধর করা হচ্ছে। নিজেদের মধ্যে নিজেরা মামলা করে নতুন সমাজ গড়ার তৎপরতা, যারা এ সম্বন্ধে কিছু বলা বা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে তাদেরকে দালাল বলে হামলা উল্টা মামলা দেওয়া আরম্ভ হল। উপযুক্ত মেয়েদের বিবাহ হল না। বিবাহ না হওয়া মেয়েরাও খারাপ হয়ে গেল। সমাজ অনাচারে ভরে গেল। প্রতিদিন বিভিন্ন স্থানে মারামারি ঝগড়া মামলার কারণে জমিতে ঠিকমত চাষ করতে পারে নাই। দোকান গুলিতে বেচাকেনা প্রায় বন্ধ হয়ে গেল। তার উপর বাজারে বাড়ি ঘরে নতুন নতুন চাঁদা দিতে বাধ্য করছে। সমাজের অল্প বয়স্ক ছেলেরা দলবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন স্থানে লুট পাট কেউ কাউকেও মানে না। যেহেতু বিভিন্ন অজুহাতে এলাকার মুরব্বিদরকে অপমান করা হয়েছে, এখন মুরুব্বিদের সবাই ভয়ে কোন বিষয়ে কথা বলে না নিচের দিকে তাকিয়ে আসা যাওয়া করে, সব দেখে বুক ভরে আর্তনাদ করে । কারন কিছু বললে চেয়ারম্যানের দালাল বলে মারধর করা প্রতিদিনের ঘটনা। যেখানে এক সময় সবার মধ্যে শান্তি সম্প্রীতি আনন্দ ছিল এখন প্রতিটা বাড়িতে পরস্পরের মধ্যে হানাহানি মারামারি - ছোট ছেলেরা নষ্ট হয়ে গেছে, ঝগড়ার বিবাধে শিক্ষকদের সাথে খারাপ আচরণ- মুরুব্বিদেরকে থোরাই কেয়ার। বাজারেও বেচাকেনা প্ৰায় বন্ধ আয় রোজগার শূন্যের কোঠায়, মানুষ দিশেহারা- সবাই ভাবছে কি হলো এত ভালো একটা সমাজ এত সুখ কোথায় গেল?
এর মধ্যে বছর পার হল- ভিনদেশে বসবাসকারী হুজুর ভিন দেশে চলে গেলেন। চেয়ারম্যান সাহেব, "হুজুর আর শয়তানের" বিষয়টি জানতেন, কিন্তু তখন কিছু করার ছিল না। ইতিমধ্যে একদিন শয়তানের সাথে চেয়ারম্যানের দেখা হলে বলল, একটু গুড় বাঁশের পিলারে লাগানোর ফলাফল দেখেছেন, চেয়ারম্যান শয়তানের নিকট ক্ষমা চাইলো, দয়া করে তুমি আমার এলাকাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দাও। শয়তান বলল, দুঃখিত কিছুই করার নাই, আমি ধ্বংস আর অনিষ্ট করতে পারি, সৃষ্টি আর শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারি না।

মতামত লিখুন:
https://www.darktohope.org/ad/1731844310_left-banner.gif

সর্বশেষ সংবাদ

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ২ সমন্বয়ক গ্রেপ্তার
খুলনাকে হারিয়ে প্লে-অফে এক পা বরিশালের
সাইফ আলী খানের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিলেন ‘কেডি পাঠক’
তানজিদ তামিমের শতক ছোঁয়া রানে বড় জয় ঢাকার
দেশের বাজারে ফের বাড়লো সোনার দাম
মতামত- এর আরো খবর
Email: [email protected]
© 2024 Dark to Hope
🔝