বুধবার, ২২ জানুয়ারি ২০২৫,
৯ মাঘ ১৪৩১
বাংলা English हिन्दी

বুধবার, ২২ জানুয়ারি ২০২৫
মতামত
বাস্তবায়ন হচ্ছে বাংলাদেশ ধ্বংসের নীলনকশা -২
অশ্রু হাসি
Publish: Saturday, 21 December, 2024, 4:46 PM
বাংলাদেশ  ভারতের সাথে ৪০৯৬ কিলোমিটার সীমান্ত নিয়ে পৃথিবীর ৫ম বৃহত্তম সীমান্ত বেষ্টিত দেশ। এত বৃহৎ সীমান্ত থাকার অনেক সুবিধা, যদি দুই দেশের সম্পর্ক ভালো থাকে। যে কোনো তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে আপনার প্রতিবেশী যত দ্রুত আপনার সাহায্যে আসতে পারবে, দূরের বন্ধু যত ধনাঢ্য হোক ইচ্ছা থাকলেও তাৎক্ষনিক দূরত্বের কারণে আপনার পাশে দাঁড়াতে পারবেনা। আবার কোন কোন পণ্য এক দেশে ঘাটতি কিন্তু পাশ্বের দেশে উদ্বৃত্ত, উদ্বৃত্ত পণ্য দূর দেশে বিক্রয়ে পরিবহন খরচ বেশি এবং যদি পচনশীল হয় তখন বিক্রয় করা কঠিন। ঘাটতি প্রতিবেশী ও উদ্বৃত্ত প্রতিবেশীর সাথে সম্পর্ক ভালো না থাকলে তার পক্ষে দূর দেশ থেকে বেশি মূল্যে ক্রয় করতে হয়। প্রতিবেশীর সাথে সুসম্পর্কের কারণে যেমন হাজারটা সুবিধা পাওয়া যায় তেমনি বিকল্পহীন।
এখন পাকিস্তানের ভারত বিরোধী টনিক বাংলাদেশের ড. ইউনূসের সরকার খুব ভালোভাবে বিতরণ করছে। তাই জনগণকে সতর্ক হওয়ার বিকল্প হলো পরিপূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাওয়া।

বিগত শতকে ইউরোপে প্রায় সব দেশ পরষ্পরের সাথে বৈরী সম্পর্ক ও যুদ্ধে লিপ্ত  ছিল কিন্তু শিক্ষা, জ্ঞান, বিজ্ঞানে প্রায় প্রতিটি দেশ উন্নত হওয়ার পরও তারা দরিদ্র ছিল। পরষ্পরের মধ্যে সুসম্পর্কের অভাবে কারও উদ্ভাবনী তথ্য প্রযুক্তি আরো সানিতকরণ ও অন্য দেশের উপকারে আসতো না এবং একের অতিরিক্ত সম্পদ অন্যর কাজে লাগত না। উদ্বৃত্ত ও ঘাটতির দেশ উভয়ে উপকৃত হওয়ার পরিবর্তে ক্ষতিগ্রস্ত হত। যখন তারা উপলব্ধি করল পরষ্পরের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন ব্যতিত তাদের উন্নয়ন অসম্ভব। তখন সব দেশ মিলে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন গঠন করে সবার জন্য এক মূদ্রা এবং ভিসা মুক্ত ভ্রমণ ব্যবস্থাসহ একের পণ্য প্রযুক্তি অন্য দেশ প্রতিনিয়ত ব্যবহার ও সম্পর্ক উন্নয়নের সম্ভাব্য সব করার প্রেক্ষিতে আজ ইউরোপের সব দেশের মানুষ সর্বাঙ্গীন উন্নত এবং এখন সবাই দরিদ্রতা দূর করে উন্নত জীবন যাপন করার সুযোগ ভোগ করছে। তাই সম্পর্ক উন্নয়ন পরষ্পরের জন্য জরুরী এবং সম্পর্ক লালন না করতে পারলে ক্ষতি হয় অতুলনীয়। সম্পর্ক অল্পতে নষ্ট করা যায় কিন্তু পুনঃ উদ্ধারে বহু ক্ষতির বিনিময়ে হতে পারে? আমি লক্ষ্য করছি যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায় নাই তারা প্রচার করছে ভারতের আগ্রাসনের নীতি, আমরা সব দিয়েছি কিন্তু তারা কিছুই দেবে না, এটা হয় না? যেহেতু আমরা লেখাটা বাংলাদেশের স্বার্থে তাই যদি প্রশ্ন করি তাদেরকে যে আমরা ভারতকে কি দিয়েছি এবং ‍কি নিয়েছি। নিশ্চয়ই নিম্নের কয়েকটি বিষয় ব্যতিত আলোচনার অন্য কিছু নাই। 

(১) ভারত পাকিস্তান ভাগ হওয়ার সময় ২৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার সমুদ্রসীমানা এবং মিয়ানমারের সাথে বৃহৎ সমুদ্র সীমানা বিরোধ ছিল কিন্তু পাকিস্তানের ২৩ বছর এবং বাংলাদেশে ৪০ বছরে কোন সরকার এই সমস্যা সমাধান উদ্যোগ নেয় নাই। শেখ হাসিনা সরকার উদ্যোগ নিয়ে ভারত ও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করে, ২০১২ সালে ভারতের সাথে বিরোধকৃত ২৫ হাজার বর্গ মাইলের মধ্যে ১৯৪০০ বর্গকিলোমিটার ও মিয়ানমার থেকে ১ (এক) লক্ষ ১১০০০ (এগারো হাজার) বর্গকিলোমিটার সমুদ্র বাংলাদেশ অর্জন করে। যা ছিল বাংলাদের অভূতপূর্ব প্রাপ্তি।

অন্য দিকে ভারতের সাথে বিরোধকৃত ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ১৭৪০০ একর আর ভারত পেয়েছে ৭১০০ একর । বাংলাদেশ ১০ হাজার একর জায়গা ভারত থেকে বেশি পেয়েছে। এই দুই খাতে অবশ্যই আমরা অনেক বেশি লাভবান হয়েছি।
আমার ভারত থেকে অনেক বেশি ক্রয় করি বিনিময়ে ভারত আমাদের থেকে খুব কম ক্রয় করে । বিষয় হলো যে সমস্ত পণ্য আমরা ভারত থেকে আমদানী করি যা অন্য কোথাও এর চেয়ে কম মূল্যে পাওয়া যায় না। প্রশ্ন হল তারা আমাদের থেকে কম ক্রয় করে কারণ আমাদের বিক্রয়  করার মতো বেশি পণ্য নাই। এখানে একটা বিষয় উল্লেখ করার প্রয়োজন যে বাংলাদেশও ভারতের সিংহ ভাগ ক্রয় বিক্রয় হয় বেসামরিক খাতে মাধ্যমে।
 
(২) আমাদের কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তি বলেন, আমার ভারত থেকে অনেক বেশি ক্রয় করি বিনিময়ে ভারত আমাদের থেকে খুব কম ক্রয় করে । বিষয় হলো যে সমস্ত পণ্য আমরা ভারত থেকে আমদানী করি যা অন্য কোথাও এর চেয়ে কম মূল্যে পাওয়া যায় না। প্রশ্ন হল তারা আমাদের থেকে কম ক্রয় করে কারণ আমাদের বিক্রয়  করার মতো বেশি পণ্য নাই। এখানে একটা বিষয় উল্লেখ করার প্রয়োজন যে বাংলাদেশও ভারতের সিংহ ভাগ ক্রয় বিক্রয় হয় বেসামরিক খাতে মাধ্যমে। ভারত বাংলাদেশের ভৌগোলিক দিক থেকে ২২ গুন বড় ও জনসংখ্যাও প্রায় ৯ গুন বেশি হওয়ায় তাদের রপ্তনি করার পণ্যও বেশি। অন্যদিকে যেহেতু ভারত আমাদের ভৌগোলিক সীমানার ৩ দিকে বেষ্টিত তাই কম মূল্যে আমারা ক্রয় করতে পারি। ঐ সমস্ত পণ্য চায়না, কোরিয়া বা অন্য দেশ থেকে ক্রয় করতে হয় অনেক বেশি দামে। কোন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান যেখান থেকে কম মূল্যে সুবিধাজনক পণ্য পাবে সেখান থেকেই ক্রয় করবে। ব্যক্তি তার লাভের বিষয় গুরুত্ব দেন, কোন দেশ তা তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। যেমন প্রায় আলু, পিয়াজ ইত্যাদি ও সুতা, রং বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ছাড়াও অনেক পণ্য ভারত থেকেই আমাদানি করে কারণ কয়েক দিনের ব্যবধানে পণ্য চলে আসে আবার দামও কম। অন্য দিকে চায়না, জামানি বা অন্য দেশ থেকে ক্রয় করতে হলে দাম ও সময় বেশি লাগে। ঠিক একই ভোবে ভারতে উৎপাদনকারীরাও তাদের উদ্ধিত্ত এই সব পণ্য অন্য দূর কোন দেশ বিক্রয় সহজ নয়। এখনে উভয়ের জন্য লাভ জনক হলো পরষ্পরের মধ্যে সুসম্পক প্রতিষ্ঠা  ও পরষ্পরের ঘাটতি ও উদ্বৃত্ত সুবিধাজনক ব্যবহার করে উভয়ে লাভবান হওয়া। এক্ষেত্রে সরকারকে অত্যন্ত দায়িত্বশীল ভুমিকা পালন করতে হয় যেন জনগণের মধ্যে কোন ভুলবোঝা বুঝির সৃষ্টি না হয়।

 

(৩) ভারত থেকে পানি এসে আমাদের দেশের বন্যা হয়, প্রাথমিকভাবে এটা ঠিক মনে হলেও সঠিক তথ্য হল  চায়নার তিব্বত উৎস থেকে ভারত হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। একই ভাবে নেপাল ও ভুটানের কর্নালি (Karnali) কৌশি (Koshi) এবং মানস (Manas) নদীর পানি ভারত হয়ে বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় উভয় দেশের নদীর দুই কুল উপচে সমস্ত লোকালয় ভাসিয়ে বঙ্গোপসাগরের পতিত হয়।

সব সময় পৃথিবীতে উৎপত্তিস্থল থেকে নিম্ন অঞ্চলের মাধ্যমে পানি প্রবাহিত হয়। এক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট দেশে গুলি আলোচনার সমাধানের সবার সম্ভব্য কম ক্ষতির প্রচেষ্টা নেওয়া হয়।

অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে পানির হিস্যা নিয়ে বিশেষ করে তিস্তার ন্যায্য পানি বন্টনের চুক্তি বাস্তবায়ন এখনও হয় নাই। এটা নিয়ে সম্পর্ক নষ্ট না করে আলোচনার মাধ্যমে হওয়া উচিত।

 

(৪) ভারত থেকে বাংলাদেশ নিজ উৎপাদন থেকে কম মূল্যে বিদ্যুৎ আমদানী করে, যেমন প্রতি কিলোওয়াট ০.০৫ - ০.০৭ ডলার আর আমাদের উৎপাদনে মুল ০.০৮ - ০.১২ ডলার এখানে আমরা অনেক লাভ করি। ভারতের ঝাড়খন্ড প্রচুর কয়লা আছে কিন্তু ঐ অঞ্চলে ভারতের বিদ্যুৎ চাহিদা নাই। ভারতের আদানীর সাথে চুক্তি হয় আদানী তাদের টাকায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করবে, যার প্রকল্প ব্যয় প্রায় ২০৪০০ কোটি টাকা এবং এই প্রকল্পের উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাংলাদেশে ক্রয় করবে ০.০৮-০.০৯ সেন্টে কয়লা দিয়ে আমরা যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করি তার মূল্য আরও বেশি এখনেও বাংলাদেশ লাভজনক অবস্থায় আছে কারণ বাংলাদেশ প্রকল্প স্থাপনে কোন বিনিয়োগ নাই আবার উৎপাদিত বিদ্যুৎ কম খরচে ক্রয় করে।

সমগ্র ইউরোপে পরস্পরের নিকটে বিদ্যুৎ ক্রয় বিক্রয় করে উভয়ে উপকৃত হয়। ইউরোপের দেশ যেমন – সুইডেন, ডেনমার্ক ইত্যাদি সহ প্রায় সব দেশ জল ও সৌর বিদ্যুৎ অনেক কম মূলে উৎপাদন করলেও স্বীয় দেশের দূর প্রান্তে পৌঁছাতে খরচ অনেক বেশি। তাই নিকট প্রতিবেশী অন্য দেশের কাছে বিক্রয় করে উভয় লাভবান হচ্ছে। যা ইউরোপের সব দেশ এই পদ্ধতি অনুসরণ করছে। একই ভাবে বাংলাদেশের দক্ষিণ ও পশ্চিম অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিজস্ব ব্যবস্থাপনা অধিক ব্যয়বহুল তাই ভারত থেকে কম মূল্যে তাদের উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ ক্রয় করে বাংলাদেশ লাভবান হচ্ছে।

ভারতকে আমরা কি সুবিধা দেই এবং কি সুবিধা নেই তা সুনির্দিষ্ট করে ব্যাখ্যা দিলে দেখা যাবে যে বিগত সরকার গত ১৫ বছরে বহু বেশি সুবিধা নিয়েছে সুসম্পর্ক বজায় রেখে। আর এখনকার সরকার ও তার রাজনৈতিক বন্ধুরা যেহেতু মিথ্যা, মুখরোচক বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে এবং বুলি ছাড়া জনগনের জন্য তাদের কিছুই নাই। তাই ভারত বিরোধী রটনা যা আফিমের মত কাজ করে, যেমন মাদকাসক্ত ব্যক্তির শেষ হল- হয় নিজে এবং পরিবারকে ধ্বংসের মধ্যে মাধ্যমে। তেমনি ভারত বিরোধী টনিক কাজে লাগিয়ে পাকিস্তানের সব সরকার ক্ষমতার থাকার চেষ্টার মাধ্যেমে তাদের দেশকে পৃথিবীতে ১নং ভিক্ষুকের জাতিতে রূপান্তরিত করেছে তারপরও এই টনিক বিতরন বন্ধ হয় নাই। এখন পাকিস্তানের ভারত বিরোধী টনিক বাংলাদেশের ড. ইউনূসের সরকার খুব ভালোভাবে বিতরণ করছে। তাই জনগণকে সতর্ক হওয়ার বিকল্প হলো পরিপূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাওয়া।
মতামত লিখুন:
https://www.darktohope.org/ad/1731844310_left-banner.gif

সর্বশেষ সংবাদ

সাইফ আলী খানের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিলেন ‘কেডি পাঠক’
তানজিদ তামিমের শতক ছোঁয়া রানে বড় জয় ঢাকার
দেশের বাজারে ফের বাড়লো সোনার দাম
চুরি যাওয়া অর্থ ফেরাতে বিশ্বনেতাদের সহায়তা চাইলেন ড. ইউনূস
১৪৪ ধারার মধ্যেই সাতক্ষীরায় বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৪
মতামত- এর আরো খবর
Email: [email protected]
© 2024 Dark to Hope
🔝