রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫,
১৪ বৈশাখ ১৪৩২
বাংলা English हिन्दी

রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫
মতামত
একজন শেখ হাসিনা ও বদলে যাওয়া বাংলাদেশ
নয়ন বিশ্বাস রকি
Publish: Tuesday, 8 April, 2025, 11:11 AM

ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, পথপ্রদর্শক ও উন্নয়নের সারথী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংগ্রামী সভানেত্রী। তিনি মহান পিতার আদর্শের উত্তরসূরী। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব প্রমাণ করে পিতার আদর্শ তাঁকে কতটা গভীরভাবে আকৃষ্ট করেছে। পিতা যেমন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে পশ্চিম পাকিস্তানের স্বৈরশাসকের ২৪ বছরের শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করেছেন দেশের বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, ঠিক তেমনি শেখ হাসিনা পাকিস্তানি দুঃশাসন থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘ ৪০ বছর আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। এই দীর্ঘ সংগ্রামে কন্যা গণমানুষের অধিকার আদায়ের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতেও দ্বিধা করেননি।

বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৭ই মে প্রবাস জীবনের অবসান ঘটিয়ে দেশে ফিরে আসেন এবং মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অবতীর্ণ হন; পিতার অসমাপ্ত কাজ হাতে নেন, হাল ধরেন তাঁর রেখে যাওয়া সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের। এই দীর্ঘ ৪০ বছরের পথ পরিক্রমায় বঙ্গবন্ধুকন্যাকে বহু বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে। এজন্য তাঁকে জেল-জুলুম ও নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। এমনকি ষড়যন্ত্রকারীরা তাঁকে হত্যার চেষ্টাও করেছে। কিন্তু তিনি অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে বলেছেন, "জীবন দিয়ে হলেও এ দেশের বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের চেষ্টা করে যাব। আমার হারাবার কিছু নেই, পাবারও কিছু নেই। আমি শুধু অধিকারহারা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই।" গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তাঁর অঙ্গীকার এবং এর জন্য নিরলস আন্দোলনের ফসল আজকের গণতান্ত্রিক পরিবেশ। একইসঙ্গে মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তিনি অবিচল। তাঁর দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব তাঁকে গণতন্ত্রের মানসকন্যা রূপে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তিনি আজ গণতন্ত্রের ইতিহাসের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।

আজ বাংলাদেশের অনেক প্রশংসা। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার গবেষণায় গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ সম্পর্কে আগ্রহ-উদ্দীপক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সর্বশেষ ইনস্টিটিউট অব ইকোনমিক্স অ্যান্ড পিস প্রকাশিত বিশ্বশান্তি সূচক ও জিপিআই তারই প্রমাণ। আমরা হোসেন মোহাম্মদ এরশাদের শাসন আমল দেখেছি, আমরা দেখেছি বিএনপির শাসন আমল, যখন দেশে বোমাবাজিসহ জঙ্গিবাদের উত্থান অনেক বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু বিগত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার শাসনামলে ইতিহাসের সর্বোচ্চ উন্নয়নমূলক কাজ বাংলাদেশে হয়েছে।

আত্মসমালোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ফিরে আসা উচিত সাধারণ মানুষের কাছে, রাজপথে জনতার কাতারে। বিগত সময়ে আমরা দেখেছি আওয়ামী লীগের শাসনামলে অনেক সংসদ সদস্য, মাননীয় মন্ত্রী এবং তাঁদের পরিবার, আত্মীয়-স্বজনদের উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমনকি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদেও অধিষ্ঠিত করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রীও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছেন। এমপি-মন্ত্রীদের আত্মীয়-স্বজনদের দলের বিভিন্ন পদ-পদবী ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বসানো হয়েছে। এই বিষয়টি দলের সর্বস্তরের লক্ষ লক্ষ কর্মী, যারা দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ, তাঁরা কখনোই ভালোভাবে নেয়নি। ভেতরে হয়তো অনেকেই কষ্ট পেয়েছেন, কিন্তু বলার সুযোগ ছিল না। বারবারই বলা হয় দলের নির্যাতিত তৃণমূল কর্মীদের পছন্দ ও পরামর্শ অনুযায়ী মনোনয়ন দেওয়া হবে, কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন খুব কমই দেখা যায়, যা শুধু কথার কথাই থেকে যায়। এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে, যাতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দেওয়া কথা রক্ষা হয়।

বিগত দিনে যাঁদেরকে সাংগঠনিকভাবে বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাঁদের অনেকেই তাঁদের দায়িত্ব সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পালন করেননি। সংগঠনের খোঁজখবর সঠিকভাবে নেননি, বরং অন্য চিন্তাভাবনায় ব্যস্ত ছিলেন। দলের ভিতরে চাটুকার, তেলবাজ ও হাইব্রিডদের ব্যাপক অনুপ্রবেশ ঘটেছে। বংশগত আওয়ামী লীগ, যাঁরা রক্তে-মাংসে আওয়ামী লীগের আদর্শ ধারণ করেন, তাঁদের প্রাপ্য সঠিক মূল্যায়ন করা হয়নি, বরং তাঁদের দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। আজকে তাঁদের অনেকেই আক্রান্ত, নির্যাতিত, লাঞ্ছিত এবং মিথ্যা মামলা-হামলার শিকার। বর্তমান সময়ে আমরা আরও দেখতে পাই, যাঁরা বিগত শাসনামলে ক্ষমতার কেন্দ্রে ছিলেন, আজ তাঁদের মুখে কোনো কথা নেই, তাঁরা নীরব হয়ে গেছেন, মনে হয় যেন বিলীন হয়ে গেছেন। অথচ বর্তমান সময়ে দলের জন্য ঝুঁকি নিয়ে যাঁরা কাজ করছেন, বিগত সময়ে হয়তো তাঁরা দলের আশেপাশে ছিলেন না, কিন্তু তাঁরাই প্রকৃত আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ে ধারণ ও লালন করেন, দেশকে ভালোবাসেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানান।

এই সমস্ত বিষয় থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে বেরিয়ে আসতে হবে। তাহলে লক্ষ লক্ষ আত্মত্যাগী কর্মী ও সর্বস্তরের মানুষের পূর্ণ সমর্থন পাওয়া যাবে। বাংলাদেশ জাতি পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন, স্বচ্ছ, সৃজনশীল, প্রগতিশীল, বিনয়ী ও কর্মী-বান্ধব নেতৃত্ব দেখতে চায়। ষড়যন্ত্রকারীরা যতই ষড়যন্ত্র করুক না কেন, আওয়ামী লীগকে ভেঙে ফেলা সম্ভব নয়। স্বর্ণ যেমন যত পোড়ে ততই খাঁটি হয়, তেমনি আওয়ামী লীগকে যত নির্যাতন করা হবে, তত বেশি শক্তিশালী হয়ে রাজপথে জনসমুদ্রে জেগে উঠবে। আওয়ামী লীগ একটি অনুভূতির নাম, আওয়ামী লীগ একটি মহাসাগর, যেখান থেকে ২৪ বালতি জল সরিয়ে নিলে কিছুই যায় আসে না। তবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আত্মসমালোচনার মাধ্যমে ফিরে আসা উচিত এবং অতীতের ভুলত্রুটি স্বীকার করা উচিত। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যেমন কিছু ভুল রয়েছে, তেমনি রাষ্ট্র পরিচালনায় ৫৩ বছরের ইতিহাসে আওয়ামী লীগের উন্নয়নমূলক কাজের ইতিহাসও কম নয়।

বর্তমানে বাংলাদেশে সংস্কারের নামে অপশাসন চলছে, মিথ্যা মামলা দিয়ে মানুষকে নির্যাতন করা হচ্ছে, মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ ষড়যন্ত্রের কাছে হার মানবে না এবং কখনোই মাথা নত করবে না, বরং আবার ঘুরে দাঁড়াবে। হে স্বাধীন বাঙালি, ঘুমিয়ে থেকো না, রুখে দাঁড়াও। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যদি হেরে যায়, তাহলে বাংলাদেশ হেরে যায়। যখনই বাংলাদেশের উপর আঘাত আসে, তখনই এশিয়া মহাদেশের ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের পাশে গিয়ে রাষ্ট্রকে রক্ষা করার জন্য জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করে – এটাই আওয়ামী লীগের নৈতিক চরিত্র ও দলের আদর্শ।

লেখক : নয়ন বিশ্বাস রকি, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা
মতামত লিখুন:
https://www.darktohope.org/ad/1731844310_left-banner.gif

সর্বশেষ সংবাদ

ইন্টারপোলের মাধ্যমে পুতুলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি
বিরতি ভেঙে পর্দায় ফিরলেন টয়া
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন
কানাডায় উৎসবে গাড়ি হামলায় ৯ জনের মৃত্যু
এবার নিলামে উঠছে এস আলমের স্টিল ও তেল মিল, বিদ্যুৎকেন্দ্র
মতামত- এর আরো খবর
Email: darktohope@gmail.com
© 2024 Dark to Hope
🔝