বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫,
১৯ ভাদ্র ১৪৩২
বাংলা English हिन्दी

বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
মতামত
আমাদেরকে ক্ষমা করো, হে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব
অশ্রু হাসি
Publish: Friday, 15 August, 2025, 2:26 AM









শত শত বছর পূর্বে মানুষের ন্যূনতম চাহিদা পূরণের জন্য কত মতাদর্শের লড়াই-সংগ্রাম হয়েছে। শোষক আর শোষিত এই দুইয়ের মধ্যে শোষিতদের সংখ্যা অনেক বেশি হলেও শোষকেরা অনেক ক্ষমতাবান, কারণ তারা অর্থ-বিত্ত, শিক্ষাতে অগ্রগামী। বিত্তবানরা মূলত শিক্ষা ও কথাবার্তার কারণে কূটকৌশলে ছিল পটু। তাই সমাজের সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে তাদের স্বীয় শ্রেণির বিরুদ্ধে ব্যবহার করাও ছিল সহজ। তারপরও বিত্তবান পরিবারে জন্মগ্রহণ করা ব্যতিক্রম কেউ কেউ মানবতার মুক্তির জন্যই জন্মায় এবং দেশ ও জাতির জন্য আত্মোৎসর্গ করে। সে কারণে শত প্রতিকূলতার মাঝেও পৃথিবীর এত উন্নতি। 

তেমনি একজনের জন্ম হয় বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। তার নাম রাখা হয় শেখ মুজিব। তৎকালীন অর্থনৈতিক অবস্থার দিক থেকে তার পরিবার ছিল বিত্তবান। যতটুকু ইতিহাস থেকে জানা যায়, তার পূর্বপুরুষ শেখ আব্দুল আউয়াল দরবেশ, ইসলাম ধর্ম প্রচারক হিসেবে প্রায় ৪০০ বছর পূর্বে মোগল আমলে এ দেশে আগমন করেন। শেখ মুজিবের পিতা ধারাবাহিক ভাবে জমিদার শ্রেণির লোক ছিলেন। শেখ মুজিব গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুল, কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে (বর্তমান যা মাওলানা আজাদ কলেজ নামে পরিচিত) পড়ালেখা শেষে পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করেন। তিনি গোপালগঞ্জ স্কুলে পড়ার সময় শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক। পরবর্তীতে তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে মানুষের দারিদ্র্য দূর ও মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন।

১৯৯৫ সনে আমি টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারত করতে গেলে, একজন মুরব্বি শেখ মুজিবকে একজন মানবদরদী মানুষ হিসেবে তাঁর বাল্যকালের বর্ণনা দেন। যখন মানুষের প্রতি অবিচার হতো তিনি তার প্রতিবাদ করতেন। মানুষের ক্ষুধা-যন্ত্রণা তাকে ব্যথিত করত। ভুখা-নাঙ্গা মানুষের আর্তনাদ তাকে প্রতিবাদী করে তোলে। এমন একটি ঘটনা ওই প্রবীণ লোকটি বলেছিল যে, এক বছর মানুষের ফসল ভালো হয়নি, কিন্তু বঙ্গবন্ধুদের যেহেতু অনেক জমি ছিল, তাই ওনাদের গোলা ভরা ধান ছিল। মানুষ ক্ষুধার কারণে হাহাকার করছিল, তখন বঙ্গবন্ধু স্কুলে পড়তেন। মানুষের এই ক্ষুধার যন্ত্রণা দেখে তিনি নিজেদের গোলা খুলে দিয়ে মানুষকে বিনামূল্যে ধান বিতরণ করেন, যা সে সময় ছিল বিরল। স্বীয় সম্পদের বিনিময়ে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানো ছিল তার মানসিকতা। আর একবার সম্ভবত ১৯৬৯ সালে নোয়াখালীর চর এলাকায় জলোচ্ছ্বাসে ওই সব মানুষ নিঃস্ব হয়ে গেল। তখন ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি হলেও কেউ জলোচ্ছ্বাসকবলিত মানুষের খবর নেয়নি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তার দলবলসহ সম্ভাব্য ত্রাণসামগ্রী নিয়ে গিয়ে তা বিতরণ করার পরও অসহায় মানুষের বিবস্ত্র অবস্থা দেখে তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা নিজেদের পরিধেয় আন্ডারওয়্যার ব্যতীত সব জামাকাপড় খুলে মানুষকে দিয়ে আসেন। তখন নোয়াখালীর আওয়ামী লীগের নেতারা তাদের জন্য বস্ত্রের ব্যবস্থা করেন। সর্বত্র এমন লক্ষ্য করা গেছে যে, বাঙালিদের দুঃখ-কষ্ট তাকে এত ব্যথিত করত যে, দুর্গত মানুষের জন্য সব বিলিয়ে দিতে তিনি কুণ্ঠাবোধ করতেন না। স্বীয় জাতির দুঃখ-কষ্ট তাকে পাগল করে দিত।

সেই সময় এখনকার মতো পণ্য পরিবহনের জন্য পাটের তৈরি ব্যাগ ব্যতীত অন্য ব্যবস্থা ছিল না, তাই সারা পৃথিবীতে পাটই ছিল একমাত্র মাধ্যম। উপরন্তু তখন পৃথিবীতে অনেক যুদ্ধ ছিল। যুদ্ধে সেনাবাহিনীর বাংকার তৈরির জন্য একমাত্র অবলম্বন ছিল পাটের তৈরি ব্যাগ। আর এই পাট পূর্ব পাকিস্তানে উৎপাদিত হতো। পৃথিবীর সিংহভাগ পাট পূর্ব পাকিস্তানে উৎপাদিত হয়ে পশ্চিম পাকিস্তানি মালিকানাধীন বাংলাদেশে স্থাপিত ফ্যাক্টরিতে প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রপ্তানি করা হতো। যা এখনকার পোশাক শিল্প থেকে বেশি আয় করত। সেই অর্থ পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তানে তাদের উন্নতিতে ব্যয় করা হতো। আর পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ থাকত অবহেলিত ও বঞ্চিত। কিন্তু এখানকার মানুষের করার কিছু ছিল না। বঙ্গবন্ধু দেখলেন এ দেশের কৃষক উৎপাদন করে লাভ হয় পশ্চিমের। বাঙালিরা ইন্ডাস্ট্রি করতে গেলে ব্যাংক থেকে ঋণ পায় না, আমদানি-রপ্তানির লাইসেন্স পায় না। যথাযথ যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চাকরির ক্ষেত্রে সর্বত্র উপরের পদে পাকিস্তানিরা, আর নিম্ন পদে সীমিত সংখ্যক বাঙালিদের কর্মসংস্থান হতো। পূর্ব পাকিস্তানের প্রচুর আয়ের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হতো পশ্চিম পাকিস্তানে। সচিব, ডিসি, এসপি, ওসি এসব পদাধিকারী পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আসত। সকল ক্ষেত্রে বাঙালিদের প্রতি অবিচার করার কারণে মানুষের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দেয়। এগুলোর প্রতিবাদ করার কারণে বঙ্গবন্ধুকে বারবার জেলে বন্দি করা হতো। ওই সময় গুটি কয়েক রাজনৈতিক নেতা ব্যতীত বেশিরভাগ নেতারা নিজস্ব সুবিধার জন্য পাকিস্তানিদের প্রতি সমর্থন যোগাত। বছরের পর বছর জেল খেটেছেন, মোট প্রায় ১৪ বছরের বেশি জেল খাটার পরও বাঙালিদের অধিকারের ব্যাপারে আপস করেননি। সর্বশেষ ১৯৬৬ সনে বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য ৬ দফা প্রণয়ন করে এবং পাকিস্তানের লৌহমানব আইয়ুব খানের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে লাহোরে গোলটেবিল বৈঠকে ৬ দফা উপস্থাপন করেন এবং ৬ দফার ব্যাপারে কোনো আপস নয় বলে আন্দোলন আরম্ভ করেন। ছয় দফায় ছিল বাঙালিদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি ও বাংলার মানুষকে শোষণ থেকে রক্ষা করে ন্যায্যতার ভিত্তিতে বসবাস করার সুযোগ। কিন্তু পাকিস্তানিরা কোনোভাবেই এই ৬ দফা মানতে চায়নি।

অন্যদিকে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হলেও তারা ১৯৫৬ সালে প্রথম সাংবিধানিক ব্যবস্থা চালু করে। আর এক সাথে স্বাধীন হলেও ভারত ১৯৪৯ সনে অর্থাৎ ২ বছরের ব্যবধানে সাংবিধানিক ব্যবস্থা চালু করে। কারণ, সাংবিধানিক ব্যবস্থা হলো আইনের শাসন ও শাসকের জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা। পাকিস্তানে বারবার সেনা শাসন কায়েম হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সনে দেশে ফিরেই ১৯৭২ সনের নভেম্বর অর্থাৎ এক বছরেরও কম সময়ে গণপরিষদের মাধ্যমে সংবিধান অনুমোদন করে সাংবিধানিক রাষ্ট্র হিসেবে দেশ পরিচালনা আরম্ভ করেন। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু যত জনপ্রিয় বা ক্ষমতাবানই ছিলেন, আইন এবং সংবিধান দ্বারা দেশ চালানোর উদ্দেশ্য ছিল জনগণের অধিকার এবং দেশ পরিচালনায় যেন নিজেরও জবাবদিহিতা থাকে। অথচ পাকিস্তানে বারবার সরাসরি বা সেনা প্রভাবিত শাসনের কারণে পাকিস্তান কোনো উন্নতি করতে পারেনি। যেমন, বর্তমানে পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় ১৮২৩ ডলার, আর শেখ হাসিনার সময় ২০২৪ সনে বাংলাদেশের ছিল ২৮২৪ ডলার, যদিও ইউনুস সাহেবের আশীর্বাদে এখন ২৬৯০ ডলারের নীচে। যত কিছুই হোক, আজও বাংলাদেশের সেনা হস্তক্ষেপ পাকিস্তানের মতো না হওয়ায় এবং সংবিধান চালু থাকায় দেশ এগিয়ে যাচ্ছিল। সরাসরি বললে এখন দেশকে ধ্বংস করার জন্য সংবিধান সম্পর্কে অনেক নেতিবাচক কথা শুনতে হচ্ছে। এমন দুর্ভাগ্য সম্বন্ধে এদেশের মানুষ ভাবেনি।
ড. ইউনুস ও ষড়যন্ত্রকারীরা বিভিন্ন দেশি-বিদেশি শক্তির সহযোগিতায় জনগণের ক্ষমতা দখল করে দেশকে ধ্বংস করার কাজে লিপ্ত আছে। বর্তমানে যারা ক্ষমতায়, তারা মুখে গণতন্ত্র, সুশাসন, উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লোভ দেখান। আর ড. ইউনুস বলেন তিনি এমন দেশ তৈরি করবেন, যা কেউ চিন্তা করতে পারে নাই। বাস্তবে তিনি সত্যি বলেছেন, আমরা বুঝি নাই। যেমন - তিনি বিচার ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছেন, পুলিশ প্রশাসন স্মরণকালের সবচেয়ে অসম্মানিত অবস্থায় পৌঁছেছে, সাংবাদিকতাকে নিজেদের নির্দেশ পালনকারী হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করছেন। গ্রামে গ্রামে, পাড়ায় পাড়ায় দ্বন্দ্ব-শত্রুতা আরম্ভ করে দিয়েছেন। এখন গ্রামে পাড়ায় পাড়ায় মানুষ মারামারি-বিবাদে লিপ্ত থাকে। অতীতে রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে দলগত দূরত্ব থাকলেও সহাবস্থান ছিল। এখন ইউনুস দর্শন পরস্পরের মধ্যে চিরশত্রুতায় রূপান্তরিত করেছেন। এই সমাজে শিক্ষক, সম্মানিত মানুষ, মুরব্বিদের সম্মান করার চিরন্তন বৈশিষ্ট্য ছিল। কিন্তু ড. ইউনুস এখন ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের উসকে দিয়ে এমন করেছেন যে, তারা যেন কাউকেও মান্য না করে এবং বলেন তরুণরা দেশ চালাবে। ছেলেবেলায় আমাদের পারিবারিক শিক্ষা ছিল যে, দলেরই হোক না কেন, মুরব্বিদের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখানো বাধ্যবাধকতা ছিল। পিতামাতারা এজন্য আমাদের কঠোর শাসন করতেন, শাস্তি দিতেন বা ওনাদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য বাধ্য করতেন। আর ড. ইউনুস ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের উসকানি দিয়ে বিচারপতিসহ অন্য বিচারপতিকে অপমান করিয়েছেন, তাদের শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করেছেন, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারের গালে প্রকাশ্যে জুতাপেটা করিয়েছেন। এমন কি যারা পিটিয়েছে তাদেরকেও পুরস্কৃত করেছেন। সচিব, আইজিপি, সংসদ সদস্যদের, মন্ত্রী - সবাইকে পিছমোড়া বেঁধে বোঝাচ্ছেন এদেশে তার ইচ্ছায় না চললে কেউই মাফ পাবে না। যা পৃথিবীর কোথাও কেউ কখনও দেখেনি।

অনেক আগে একবার তাইওয়ানে গিয়ে দেখি শিক্ষকরা সমাজের সবচেয়ে সম্মানিত মানুষ। শুধু ছাত্র অবস্থায়ই নয়, ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পরও দেখেছি জাপানে কীভাবে মাথা নত করে শিক্ষককে সম্মান দেখায়। যুক্তরাষ্ট্রে এবং যুক্তরাজ্যেও শিক্ষকদের প্রতি অপার ভক্তি দেখা যায়। কিন্তু ড. ইউনুস বলেন, তরুণরা দেশ চালাবে। কিন্তু তারা তো ছাত্র, তাদের কি শিখতে হবে না? তার আসল উদ্দেশ্য হলো তার প্রয়োজনীয় কাজ করার জন্য 'মব' বাহিনী প্রয়োজন, যা ছাত্র ছাড়া অন্যদের দিয়ে হবে না। ছোটবেলায় আমরা যখন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম, তখনও শিক্ষক ও গুরুজনদের মন থেকে সম্মান করতাম। এবং ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র যখন দেখতাম সচিব, মন্ত্রী, এমপি, বা পুলিশের আইনজীবী, তখন পুলকিত হতাম এবং তাদের মতো হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু এখন ইউনুস সাহেবের নেতৃত্বে ভাইস-চ্যান্সেলর, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রী, এমপি, সচিব, পুলিশের আইজিকে যেভাবে অপমান করা হচ্ছে, তাতে অবাক হচ্ছি। এ কী দেখছি? আগামী প্রজন্মের জন্য কী শিক্ষা আমরা দিচ্ছি? তারা তো এখন অপরাধী বলে প্রমাণিত নয়। ড. ইউনুস কী করে এটা করতে পারেন? তিনি কি মানুষের?
মনে হচ্ছে ড. ইউনুস এ দেশকে স্থায়ীভাবে ধ্বংস করার জন্য আগামী প্রজন্মের সন্তানদেরকে শিক্ষা বিমুখ ও বেয়াদব তৈরি করছেন। তিনি চুরি-ডাকাতিকে উৎসাহিত করেছেন। গত এক বছরে এ দেশে পৃথিবীতে সর্বোচ্চ ছিনতাই, চাঁদাবাজি, চুরি-ডাকাতি, নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এবং এ দেশ সেরা দেশে পরিণত হয়েছে। এমন বাংলাদেশের জন্য তো বঙ্গবন্ধু সারাজীবন জেলে ঘাটেননি, ৩০ লক্ষ লোক মুক্তিযুদ্ধ করে জীবন দেননি, ২ লক্ষ মা-বোন ইজ্জত ও নির্যাতন ভোগ করেননি।

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের এই দিনে তৎকালীন বিশ্বের মানবমুক্তির বীরপুরুষ, যাঁর চোখে নির্যাতিত মানুষের মুক্তির স্বপ্ন ছিল, তাঁকে স্বাধীনতার স্থপতি বলা হয়। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের সেই ঐতিহাসিক বাড়িতে তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়। খবরটি ছিল গোটা জাতির কাছে অবিশ্বাস্য—লাখো মানুষের হৃদয়ে কান্নার ঢেউ উঠেছিল। আবার স্বপ্নহীন ও পথহারা জাতি নতুন করে পঙ্গুত্ব বরণ করে। পিতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের সময় তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা বিজ্ঞানী স্বামীর কর্মস্থল জার্মানিতে ছিলেন। শেখ রেহানাও তাঁর সঙ্গে ছিলেন। পিতা-মাতা, ভাই, আত্মীয়-স্বজন সবাইকে হত্যা করা হয়। আমি যতটুকু জানি, তখনকার চরম অসহায় সময়ে মোশতাক ও হত্যাকারীদের ভয়ে তখনকার রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন রশীদ (যিনি পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্পিকার হয়েছিলেন) ব্যতীত দুই বোনকে কেউ আশ্রয় দিতে বা সাহায্য করতে রাজি হননি। সাময়িকভাবে হুমায়ূন রশীদ সাহেবের আশ্রয়ে থাকার পর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী তাঁদের থাকা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন। কিছুদিন পর এই অকল্পনীয় শোক সহ্য করে পিতার স্বপ্নের উন্নত বাংলাদেশ গড়ার জন্য বাংলাদেশে আসার পর শত সংগ্রাম, বারবার মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে পিতার হাতে গড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পথচলা আরম্ভ করেন।
১৯৯৬ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনার সরকার শত বছরের খাদ্য ঘাটতি পূরণ করে। গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন, গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়।

এরপর ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশকে উন্নত দেশের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানোর জন্য "ভিশন ২০৪১" প্রণয়ন করা হয়। সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, বাজেট এবং উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হয়। এর ফলস্বরূপ, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশের এই অভাবনীয় সাফল্যে এশিয়া ও বিশ্বের অনেক ধনী দেশও অবাক হয়েছে। উন্নত মালয়েশিয়ার স্থপতি মাহাথির মোহাম্মদ বলেছিলেন, তাঁর দেখা মতে শেখ হাসিনা এই সময়ের পৃথিবীর অনন্য এক নেত্রী। তাঁর মতে, বাংলাদেশ কয়েক বছরের মধ্যে থাইল্যান্ড বা মালয়েশিয়ার মতো উন্নত দেশে রূপান্তরিত হবে।
আমার দেখা মতে, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৩২৯ ডলার। যে দেশের মাথাপিছু আয় ১৯৭২ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ২৫ বছরে ৯৪ ডলার থেকে ৩২৯ ডলারে উন্নীত হয়েছিল, সেই দেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মাত্র ১৫ বছরে তা ২৮২৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, দেশি-বিদেশি ও স্বাধীনতার বিরোধীদের সম্মিলিত ষড়যন্ত্র ও তথাকথিত গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশকে স্থায়ীভাবে ধ্বংস করার কাজ শুরু হয়েছে। যেন আর কখনো এই দেশ মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে যারা বর্তমানে ক্ষমতায় আছেন, তাদের প্রায় সবাই বিদেশি নাগরিক। তারা দেশটাকে ধ্বংস করে চলে যাবে, রেখে যাবে দ্রুত ধ্বংসের দিকে ধাবিত একটি দেশ। স্বাধীনতা বিরোধী এবং ১৯৭১ সালের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঠিক এটাই চেয়েছিল।

আজ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন ৩২ নম্বর বাড়ি অবহেলিত, মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান 'জয় বাংলা' বলা যায় না, মুক্তিযোদ্ধাদের জুতার মালা পরানো হয় ও জুতাপেটা করা হয়। যুব সমাজকে ভুল পথে পরিচালিত করে তাদের ধ্বংস করা হয়েছে। এত কষ্টের কথা কীভাবে লিখব, এত কষ্ট কীভাবে বুকে চাপা দেব? হে রাব্বুল আলামিন, তারপরও তোমার ওপর নির্ভর করি, প্রার্থনা করি, দুহাত তুলে প্রার্থনা করি ১৮/২০ কোটি মানুষের জন্য, যারা ভালো ছিল, সুখে ছিল, শান্তিতে ছিল—তাদের অনিবার্য ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করো। জাতির পিতার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। তাঁর অনেক ভালোবাসার সন্তান শেখ হাসিনা, শেখ রেহানাসহ সবাইকে ভালো রাখো। বঙ্গবন্ধু সারাজীবন যে জাতির কল্যাণের জন্য উৎসর্গ করেছেন, সেই জাতিকে এই জালেমদের হাত থেকে রক্ষা করো। শেখ হাসিনাকে যথাযথ মর্যাদায় বাংলাদেশে ফিরিয়ে দাও।


মতামত লিখুন:
https://www.darktohope.org/ad/1731844310_left-banner.gif

সর্বশেষ সংবাদ

বুয়েট শিক্ষার্থীদের নতুন কর্মসূচি, শুক্রবার চট্টগ্রামে মহাসমাবেশ
নিলামে ৪৭.৫০ মিলিয়ন ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক
সহকর্মীর সঙ্গে প্রেম, নেসলের সিইও লরেন্ট ফ্রেইক্স বরখাস্ত
নেপাল সফরে বাংলাদেশ দলে থাকছেন না হামজা চৌধুরি
নুরকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
মতামত- এর আরো খবর
Email: [email protected]
© 2024 Dark to Hope
🔝