ডক্টর ইউনুস নোবেল বিজয়ী, ইউরোপ-আমেরিকার প্রিয় মানুষ, আমাদের সীমাবদ্ধতার জন্য তাকে পুরোপুরি চিনতে পারি নাই। কিন্তু দেশের বেশিরভাগ মানুষ ইউরোপ-আমেরিকার প্রশংসার কারণে তাকে মনে মনে শ্রদ্ধা করত। তাই তাকে প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে পেয়ে সবাই খুশি। তিনি এমন বাংলাদেশ বানানোর ঘোষণা দিলেন যা কেউ ভাবতেও পারে নাই। তিনি বললেন তার মহাকর্মসূচির নাম সংস্কার এবং নতুন বাংলাদেশ। এই সকল গুরুত্বপূর্ণ কাজ তার একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। তার চাহিদা মতো গুণধর ব্যক্তি দেশে পাওয়া দুষ্কর ও অসম্ভব বলে আমাদেরকে ধারণা দেওয়া হয়েছে। তাই তার মতো এ দেশে জন্মগ্রহণ করে উচ্চশিক্ষার জন্য ইউরোপ, আমেরিকার মতো বিভিন্ন দেশে গিয়ে নাগরিকত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদেরকে সংগ্রহ করলেন। তাদের কেউ কেউ দুই দেশে বসবাস করেন। এই সমস্ত লোকজন খোঁজার দায়িত্ব তিনি নিলেন, কারণ রতনে রতন চিনে। ড. ইউনুস একজন বড় রত্ন, তাই রত্ন সংগ্রহের দায়িত্ব নিয়ে যাদের সংগ্রহ করলেন তারা হলেন ড. আলী রিয়াজ, ড. খলিল, ড. বদিউল আলম মজুমদার সহ প্রায় এক ডজনেরও বেশি ব্যক্তি যারা সবাই বিদেশি নাগরিক। ড. ইউনুসের নেতৃত্বে যে সমস্ত সংস্কার ইতিমধ্যে বিদেশি রত্নরা করেছেন, তার কিছু ধারণা নিচে তুলে ধরলামঃ
১) জেলখানাতে এখন কোনো খুনি, ডাকাত, জঙ্গি, দুষ্কৃতকারী বা কোনো অপরাধী আর নাই—আছে শুধু আওয়ামী লীগ সমর্থক বা তাদের নেতাকর্মী; কারণ তাদের পূর্বসূরিরা স্বাধীনতার জন্য জীবন, যৌবন ও সতীত্ব উৎসর্গ করেছেন। নতুন কোনো দুষ্কৃতকারী বা '৭১-এ স্বাধীনতার বিরোধীদের উত্তরসূরির কেউ কোনো অপরাধের কারণে গ্রেফতার হলেও দ্রুত জামিনে বের হয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
২) নিম্ন আদালতে বা উচ্চ আদালতে আওয়ামী লীগের কোনো নির্দোষ ব্যক্তিও জামিন না পাওয়া। কিন্তু শুধু জামায়াত-বিএনপি কর্তৃক অর্থের বিনিময়ে সুপারিশকৃত আওয়ামী নির্দোষ ব্যক্তি জামিন পেতে পারে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত কোনো আইনজীবী কোর্টে উপস্থিত হয়ে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে না পারা।
৩) ঊর্ধ্বতন মহিলা কর্মকর্তাকে স্যার বলা যাবে না। যেমন সচিব, ডিসি, সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার, কর্নেল, পুলিশের এসপি ইত্যাদি পদে মহিলা হলে তাদের অধস্তন পুরুষরা তাকে আপা বলবে। এখন আবার একটি ড্রেস কোড বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে নারীদেরকে গুরুত্ব দিয়ে জারি করেছে—তাও একটি বড় সংস্কার?
৪) সকল পত্রিকা বা ইলেকট্রনিক মিডিয়া সুন্দর করে মিথ্যা গল্প আগের সরকারের বিরুদ্ধে তৈরি করে প্রচার করতে হবে। অন্যথায় তাদের সকল সুবিধা বন্ধ বা তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধের হুমকি দেওয়া। সংবাদপত্র বা ইলেকট্রনিক মিডিয়া সকল খবর এমনভাবে করতে হবে যেন সরকারের দায়িত্ব পালন নিয়ে জনমনে প্রশ্ন না আসে। সুন্দর সুন্দর মিথ্যা গল্প আগের সরকারের মন্ত্রী, এমপি, নেতাদের নামে তৈরি করে কিছুদিন পরপর প্রচার করতে হবে—যেন মানুষ আগের সরকারের সকল সম্মানিত ব্যক্তিদেরকে চোর, ডাকাত, দেশ ধ্বংসকারী হিসেবে মনে করে। যদি তাদের কারো ৪০ লক্ষ টাকার সম্পদ থাকে, সেটা ৪০০ কোটি বা ৪০০০ কোটি টাকার অবৈধ অর্জন বলে প্রচার করতে হবে। আর বর্তমান সরকার যত অপরাধই করুক না কেন তা গোপন করা এবং হত্যা, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই এগুলি প্রকাশ না করা।
৫) সরকারের অপছন্দের লোকজন কোনোভাবেই আইনের ন্যায্য সুযোগ যেন না পায়; ভুলক্রমে পেলেও যে সরকারি কর্মকর্তার কারণে পেয়েছে তাকে বরখাস্ত বা ওএসডি করা।
৬) সবচেয়ে বড় সংস্কার ড. ইউনুস করেছেন—তার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের কর্মীদেরকে ব্যবহার করে মব-বাহিনী তৈরি করে গ্রাম-শহর, উপশহরে তার বিপক্ষের মানুষকে হত্যা, ধর্ষণ, চুরি, লুটপাট, ভাঙচুর ও পুলিশ ডেকে গ্রেফতার করে স্বৈরাচারীর দোসর বলে জেলে পাঠান ও জামিন না পাওয়ার ব্যবস্থা করা। আরও অনেক নিকৃষ্ট ধ্বংসের নতুন উদ্ভাবিত সংস্কার দেশে সাধারণ মানুষকে উপহার দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
৭) আরও অনেকগুলি আন্তর্জাতিক অর্জন যেমন মার্কিন বিখ্যাত কোম্পানিকে চট্টগ্রাম বন্দর দেওয়া, সেন্টমার্টিন দ্বীপ আমেরিকাকে দেওয়া, রাখাইন করিডোর দেওয়া ও তুরস্ককে যুদ্ধ সরঞ্জাম তৈরির জন্য স্থান দেওয়ার জন্য কাজ করছে।
৮) ড. ইউনুস ও তার বিদেশি নাগরিক বন্ধু বা সম্মিলিতভাবে দেশ বিক্রির জন্য এ দেশের কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সমর্থন পেয়েছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর দল এবং তার সাথে ২/১টি ছোট দল দেশ রক্ষা করতে পেরে উঠছেন না।
৯) ড. ইউনুস নিজের ৬০০ কোটি টাকার ট্যাক্স মাফ, নিজের প্রতিষ্ঠানকে ২০২৯ সাল পর্যন্ত ট্যাক্স মওকুফ করান, আদম ব্যবসার লাইসেন্স, বিকাশের মতো ব্যবসার লাইসেন্স নেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইসেন্স, তার বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের করা সকল মামলা প্রত্যাহার করান।
ড. ইউনুসের পরবর্তী সংস্কার কর্মসূচি দেখার জন্য গোটা জাতিকে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে—কিভাবে এক সাগর রক্তে অর্জিত দেশ সর্বহারা দেশে পরিণত হয়। ধন্যবাদ, ড. ইউনুসকে—তিনি একমাত্র নোবেল বিজয়ী, সেই সাথে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যেন এ দেশে আর কোনো নোবেলের জন্ম না হয়।