রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫,
৩ কার্তিক ১৪৩২
বাংলা English हिन्दी

রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
মতামত
উন্নত বাংলাদেশ রূপান্তরের নেতা শেখ হাসিনার আজ শুভ জন্মদিন। তাঁর পুনরায় ক্ষমতায়নের জন্য সারা দেশ প্রার্থনা করছে
অশ্রু হাসি
Publish: Sunday, 28 September, 2025, 8:12 AM

মানবকল্যাণে শত-হাজার বছরে স্বল্পসংখ্যক বিরল প্রতিভাবান মানুষ অবদান রেখে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে উন্নত করে সারা পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তেমনি একজন উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা মানুষ শেখ হাসিনা, যাঁর জন্মদিন আজ ২৮শে সেপ্টেম্বর। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আজ এই লেখা। তিনি হলেন বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম সন্তান শেখ হাসিনা। ১৯৪৭ সালে গোপালগঞ্জে তাঁর জন্ম হয়। পরবর্তীতে পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়ে আজিমপুর গার্লস স্কুল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে বিশিষ্ট অণুবিজ্ঞানী ডক্টর এম. এ. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন।


১৯৭৫ সনে বঙ্গবন্ধুর নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের সময় তিনি তাঁর স্বামী ড. এম. এ. ওয়াজেদ মিয়ার কর্মস্থল জার্মানিতে ছিলেন, সঙ্গে ছিলেন তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা। তাঁরা দুই বোন সেই সময় মারাত্মক নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ছিলেন। সেসময় সামরিক শাসকের ভয়ে কোনো বাংলাদেশি দূতাবাস বা পরিচিতজন তাঁদেরকে আশ্রয় দেয়নি। একরকম অনিশ্চয়তার মাঝে ভারতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী নিরাপত্তার জন্য তাঁদের দুই বোনকেই দিল্লিতে থাকার ব্যবস্থা করেন। সেখান থেকে ১৯৮১ সালের ১৭ই মে দিল্লিতে অবস্থানের পর তিনি বাংলাদেশে ফিরে পিতার স্বপ্ন পূরণের জন্য বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিয়ে দুর্গম পথে যাত্রা শুরু করেন।

বহু দুর্গম প্রতিকূল পথ ছিল, প্রতি পদে পদে ছিল মৃত্যুর ভয়। তারপরও তিনি ক্ষান্ত বা ক্লান্ত হননি। শক্তি ও সাহস নিয়ে আল্লাহর ওপর ভরসা করে কোনো বাধা মানেননি। দুর্বার গতিতে ছুটেছেন দেশের এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে—শুধুমাত্র পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশকে উন্নত দেশে রূপান্তর করে মানুষকে উন্নত জীবন দেওয়ার জন্য।

তিনি প্রথম ক্ষমতায় আসেন ১৯৯৬ সালে এবং দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসেন ২০০৮ সালে। প্রথম ও দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশকে উন্নত দেশে রূপান্তরের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে পথচলা শুরু করেন। গ্রাম, শহর, শ্রেণী-পেশা, নারী, পুরুষ, শিশু সবার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য উৎপাদন ও পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে প্রথমে বিভিন্ন মেয়াদী পরিকল্পনার রূপরেখা তৈরি করেন। তখন আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল ৩২৯ ডলার, খাদ্য উৎপাদনে ঘাটতি ছিল প্রায় ৩০ লক্ষ টন, গ্রামে বিদ্যুৎ সুবিধা ছিল ৬.৭%, শিক্ষার হার ছিল ৩৫%, গ্রামীণ পাকা রাস্তার পরিমাণ ছিল ১.০৭ শতাংশ। এইরকম যখন অবস্থা, শেখ হাসিনা সেই দিন বলেছিলেন তাঁর বাবার স্বপ্নের সোনার বাংলা, অর্থাৎ উন্নত বাংলাদেশ, তিনি দেশকে রূপান্তরিত করবেন।

ওই সমসাময়িক সময়ে বিএনপি অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান বলেছিলেন, খাদ্য ঘাটতি থাকলে ভালো ভিক্ষা পাওয়া যায়। 'পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা' বাংলাদেশের মতো গরিব দেশের জন্য নয়—তার পরিবর্তে তিনি ৩ বছর মেয়াদি PRSP (Poverty Reduction Strategy Paper) অর্থাৎ, তাঁর মতে আমরা দরিদ্র থাকব, তাই দারিদ্র্যের সঙ্গে বসবাসের জন্য কৌশলপত্রকে গুরুত্ব দেন। কিন্তু শেখ হাসিনার অন্য রাষ্ট্রনায়কদের সঙ্গে পার্থক্য—যেখানে কিছু নাই, সেখানেও তিনি স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন দেখান ও পূরণ করেন।

আমি কাছ থেকে তাঁকে দেখেছি এবং তাঁর সঙ্গে স্বল্প সময় কাজ করারও সুযোগের কারণে তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে এই লেখা লেখার ইচ্ছা জাগে। আমার মনে হয় বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর এখন দ্বিতীয়বার তিনি এত কঠিন সময় অতিবাহিত করছেন। পৃথিবীতে তাঁর মতো এই কঠিন সময়ে এত দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়ী ও মানসিকতাসম্পন্ন একজন নেতা পাওয়া দুষ্কর।

আমার তাঁকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। তাঁর অসম্ভব স্মরণশক্তি ছিল—বাংলাদেশের হাজার হাজার গ্রাম, নদী, ব্রিজ, রাস্তার কথা অকপটে বলতে পারতেন। তাই মিটিংয়ে যেকোনো প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হলে, ঐ প্রকল্পের কারণে কোন কোন এলাকা উপকৃত হবে বা কোন এলাকা বঞ্চিত হবে, তা তিনি তাৎক্ষণিক বলতে পারতেন। একবার দেশি-বিদেশি মানুষের নাম শুনলে মনে রাখতে পারতেন, যে গুণ নাকি বঙ্গবন্ধুর মধ্যেও ছিল। তাঁর পাশাপাশি মানুষের ও দেশের কাজ যত কঠিনই হোক না কেন, পুরো হৃদয় দিয়ে করতেন। তাই হয়তো তিনি মনে রাখতে পারতেন। তিনি দেশের প্রতিটি মানুষকে নিজের পরিবারের সদস্য মনে করতেন। রিকশাওয়ালা, কৃষক, দিনমজুর, বয়স্ক, স্বামী পরিত্যক্তা মহিলা, দরিদ্র, বঞ্চিত মানুষকে অকৃত্রিমভাবে ভালোবাসতেন।

তিনি ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার জন্য মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার জন্য পথনকশা তৈরি করেছিলেন। এই পথনকশার মধ্যে ২০০১ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত MDG (মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল) ও SDG (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা), এবং ২০১৮ থেকে ২১০০ সনের জন্য তাঁর গৃহীত ব-দ্বীপ পরিকল্পনাকে অন্তর্ভুক্ত করে ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন।

যার সুফলে ২০০৯ সালে যেখানে গ্রামীণ বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল ৬.৭ শতাংশ, সেখান থেকে এখন শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগ হয়েছে। গ্রামীণ রাস্তা যেখানে ১.৩০ শতাংশ ছিল, সেখানে এখন ৪৩ শতাংশ পাকা করা হয়। প্রতি ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিক, প্রতি গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়, খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা, সবজি উৎপাদন ও সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রামীণ হাট-বাজার ও পাইকারি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতির মাধ্যমে উৎপাদক ও সরবরাহকারীর আয় বৃদ্ধিকে বিবেচনায় রেখে প্রতি ইউনিয়নের সঙ্গে উপজেলার একাধিক সংযোগ পাকা সড়ক ও গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ এবং প্রতি উপজেলার সঙ্গে জেলার একাধিক ২ লেন অথবা ৪ লেনবিশিষ্ট উন্নত পাকা সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। বছরের প্রথম দিনে উৎসবমুখরভাবে সারা দেশের নতুন বই বিতরণ করা হয়। আগামী প্রজন্মকে প্রযুক্তিগত শিক্ষায় তৈরি করতে পারলে উন্নত দেশ গড়া সম্ভব। প্রচুর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ও প্রতিটি মানুষের উচ্চ প্রবৃদ্ধি আয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না হলে উন্নত দেশে গড়া সম্ভব নয়।

তাই তিনি সকল সেক্টরের ব্যবসায়ীদেরকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে উৎসাহিত করে প্রচুর শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সমস্যা সমাধানের জন্য মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, দেশের অভ্যন্তরীণ গ্যাসের স্বল্পতার বিকল্প হিসাবে LNG টার্মিনাল স্থাপনের মাধ্যমে গ্যাসের চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা, বন্দর ব্যবস্থা বহুমুখী করার জন্য মোংলা বন্দরকে সচল করা, মাতারবাড়ী ও পায়রা নতুন বন্দর চালু ও চট্টগ্রাম বন্দরকে আধুনিকীকরণের ব্যবস্থা করেন। উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য পূরণের জন্য চট্টগ্রাম একটি মাত্র বন্দর ও দেশের সব অঞ্চলের চাহিদা পূরণের জন্য অবাস্তব। দীর্ঘমেয়াদি উচ্চ প্রবৃদ্ধি পরিকল্পনার অংশ হিসাবে পারমাণবিক বিদ্যুৎসহ অসংখ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, দেশের সকল অংশের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত এবং ব্যয় ও সময় সাশ্রয়ী করার জন্য পদ্মা সেতু, যমুনা নদীর উপর ডাবল নতুন রেল ব্রিজসহ অসংখ্য ব্রিজ নির্মাণ করা হয়, যাতে দেশের সকল অঞ্চলে শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে টানেল স্থাপন করা হয় এই লক্ষ্যে, যেন মিরসরাইয়ের বিশাল শিল্প অঞ্চল থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রায় ২৫০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ করলে দেশে বৃহৎ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বড় পর্যটন খাত উন্মোচিত হবে। এরকম হাজারো উন্নয়ন কর্মসূচি যেমন নেওয়া হয়েছে এবং চলমান আছে, তেমনি শেখ হাসিনার উদ্ভাবনী চিন্তা ও ডেলটা পরিকল্পনার অংশ হিসাবে উপকূলীয় এলাকা সহ সারাদেশে হাজার হাজার বহুতলবিশিষ্ট প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেন। যে কারণে প্রতিবছর যেখানে জলোচ্ছ্বাসে হাজার/লক্ষ মানুষ মারা যেত, এখন গত ৫ বছরে ১০০ জনও অনুরূপ দুর্ঘটনায় হতাহত হয়নি এবং পানি চলে যাওয়ার সাথে সাথে ঐ সমস্ত লোকালয়ে আয়-রোজগারের ব্যবস্থা ও স্বাভাবিক জীবন-যাপনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তাঁর এই জন্মদিনে শুধু এইটুকু বলব—তাঁকে বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির দূত হিসাবে আল্লাহ প্রেরণ করেছেন বলে আমার বিশ্বাস। শেখ হাসিনার ক্ষমতামেয়াদের হাজারও অর্জনের মধ্যে অর্থনীতির কয়েকটি তথ্য তুলে ধরতে চাই।

২০০৮ সনে মাথাপিছু আয় ভারত, পাকিস্তান, নেপালের নিচে ছিল, যা ছিল ৬৩০ ডলার, আর ২০২৪ সনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কারণে ভারত, পাকিস্তান, নেপালকে পিছনে ফেলে উন্নীত হয় ২৮২৪ ডলারে। ২০০৮ সনে বাংলাদেশের জিডিপি (GDP) ছিল ৯৩ বিলিয়ন ডলার, আর ২০২৪ সনে তা হয় ৪৫১.৮৭ বিলিয়ন ডলার। ২০০৮ সনে বাংলাদেশের ব্যাংকের রিজার্ভ ছিল ৫.৩০ বিলিয়ন ডলার, আর ২০২৪ সনে তা হয়েছে ২৬ বিলিয়ন ডলারের উপরে।

তাঁর শাসনামলের কারণে দেশ উন্নয়নশীল ও আত্মপ্রত্যয়ী জাতিতে রূপান্তরিত হয়েছে। কিন্তু পরাশক্তি ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের কারণে বাংলাদেশ আজ দিশেহারা এবং প্রতিদিন ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষ আজ তাঁর পুনরায় ক্ষমতায়নের জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছেন এবং প্রার্থনা করছে শতায়ু জীবনের জন্য।“উন্নত বাংলাদেশে রূপান্তরের নেতা শেখ হাসিনার আজ শুভ জন্মদিন। তাঁর পুনরায় ক্ষমতায়নের জন্য সারা দেশ প্রার্থনা করছে।”
অশ্রু
হাসি

মানবকল্যাণে শত-হাজার বছরে স্বল্পসংখ্যক বিরল প্রতিভাবান মানুষ অবদান রেখে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে উন্নত করে সারা পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তেমনি একজন উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা মানুষ শেখ হাসিনা, যাঁর জন্মদিন আজ ২৮শে সেপ্টেম্বর। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আজ এই লেখা। তিনি হলেন বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম সন্তান শেখ হাসিনা। ১৯৪৭ সালে গোপালগঞ্জে তাঁর জন্ম হয়। পরবর্তীতে পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়ে আজিমপুর গার্লস স্কুল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে বিশিষ্ট অণুবিজ্ঞানী ডক্টর এম. এ. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন।

১৯৭৫ সনে বঙ্গবন্ধুর নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের সময় তিনি তাঁর স্বামী ড. এম. এ. ওয়াজেদ মিয়ার কর্মস্থল জার্মানিতে ছিলেন, সঙ্গে ছিলেন তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা। তাঁরা দুই বোন সেই সময় মারাত্মক নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ছিলেন। সেসময় সামরিক শাসকের ভয়ে কোনো বাংলাদেশি দূতাবাস বা পরিচিতজন তাঁদেরকে আশ্রয় দেয়নি। একরকম অনিশ্চয়তার মাঝে ভারতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী নিরাপত্তার জন্য তাঁদের দুই বোনকেই দিল্লিতে থাকার ব্যবস্থা করেন। সেখান থেকে ১৯৮১ সালের ১৭ই মে দিল্লিতে অবস্থানের পর তিনি বাংলাদেশে ফিরে পিতার স্বপ্ন পূরণের জন্য বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিয়ে দুর্গম পথে যাত্রা শুরু করেন।

বহু দুর্গম প্রতিকূল পথ ছিল, প্রতি পদে পদে ছিল মৃত্যুর ভয়। তারপরও তিনি ক্ষান্ত বা ক্লান্ত হননি। শক্তি ও সাহস নিয়ে আল্লাহর ওপর ভরসা করে কোনো বাধা মানেননি। দুর্বার গতিতে ছুটেছেন দেশের এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে—শুধুমাত্র পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশকে উন্নত দেশে রূপান্তর করে মানুষকে উন্নত জীবন দেওয়ার জন্য।

তিনি প্রথম ক্ষমতায় আসেন ১৯৯৬ সালে এবং দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসেন ২০০৮ সালে। প্রথম ও দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশকে উন্নত দেশে রূপান্তরের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে পথচলা শুরু করেন। গ্রাম, শহর, শ্রেণী-পেশা, নারী, পুরুষ, শিশু সবার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য উৎপাদন ও পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে প্রথমে বিভিন্ন মেয়াদী পরিকল্পনার রূপরেখা তৈরি করেন। তখন আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল ৩২৯ ডলার, খাদ্য উৎপাদনে ঘাটতি ছিল প্রায় ৩০ লক্ষ টন, গ্রামে বিদ্যুৎ সুবিধা ছিল ৬.৭%, শিক্ষার হার ছিল ৩৫%, গ্রামীণ পাকা রাস্তার পরিমাণ ছিল ১.০৭ শতাংশ। এইরকম যখন অবস্থা, শেখ হাসিনা সেই দিন বলেছিলেন তাঁর বাবার স্বপ্নের সোনার বাংলা, অর্থাৎ উন্নত বাংলাদেশ, তিনি দেশকে রূপান্তরিত করবেন।

ওই সমসাময়িক সময়ে বিএনপি অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান বলেছিলেন, খাদ্য ঘাটতি থাকলে ভালো ভিক্ষা পাওয়া যায়। 'পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা' বাংলাদেশের মতো গরিব দেশের জন্য নয়—তার পরিবর্তে তিনি ৩ বছর মেয়াদি PRSP (Poverty Reduction Strategy Paper) অর্থাৎ, তাঁর মতে আমরা দরিদ্র থাকব, তাই দারিদ্র্যের সঙ্গে বসবাসের জন্য কৌশলপত্রকে গুরুত্ব দেন। কিন্তু শেখ হাসিনার অন্য রাষ্ট্রনায়কদের সঙ্গে পার্থক্য—যেখানে কিছু নাই, সেখানেও তিনি স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন দেখান ও পূরণ করেন।

আমি কাছ থেকে তাঁকে দেখেছি এবং তাঁর সঙ্গে স্বল্প সময় কাজ করারও সুযোগের কারণে তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে এই লেখা লেখার ইচ্ছা জাগে। আমার মনে হয় বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর এখন দ্বিতীয়বার তিনি এত কঠিন সময় অতিবাহিত করছেন। পৃথিবীতে তাঁর মতো এই কঠিন সময়ে এত দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়ী ও মানসিকতাসম্পন্ন একজন নেতা পাওয়া দুষ্কর।

আমার তাঁকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। তাঁর অসম্ভব স্মরণশক্তি ছিল—বাংলাদেশের হাজার হাজার গ্রাম, নদী, ব্রিজ, রাস্তার কথা অকপটে বলতে পারতেন। তাই মিটিংয়ে যেকোনো প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হলে, ঐ প্রকল্পের কারণে কোন কোন এলাকা উপকৃত হবে বা কোন এলাকা বঞ্চিত হবে, তা তিনি তাৎক্ষণিক বলতে পারতেন। একবার দেশি-বিদেশি মানুষের নাম শুনলে মনে রাখতে পারতেন, যে গুণ নাকি বঙ্গবন্ধুর মধ্যেও ছিল। তাঁর পাশাপাশি মানুষের ও দেশের কাজ যত কঠিনই হোক না কেন, পুরো হৃদয় দিয়ে করতেন। তাই হয়তো তিনি মনে রাখতে পারতেন। তিনি দেশের প্রতিটি মানুষকে নিজের পরিবারের সদস্য মনে করতেন। রিকশাওয়ালা, কৃষক, দিনমজুর, বয়স্ক, স্বামী পরিত্যক্তা মহিলা, দরিদ্র, বঞ্চিত মানুষকে অকৃত্রিমভাবে ভালোবাসতেন।

তিনি ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার জন্য মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার জন্য পথনকশা তৈরি করেছিলেন। এই পথনকশার মধ্যে ২০০১ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত MDG (মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল) ও SDG (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা), এবং ২০১৮ থেকে ২১০০ সনের জন্য তাঁর গৃহীত ব-দ্বীপ পরিকল্পনাকে অন্তর্ভুক্ত করে ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন।

যার সুফলে ২০০৯ সালে যেখানে গ্রামীণ বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল ৬.৭ শতাংশ, সেখান থেকে এখন শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগ হয়েছে। গ্রামীণ রাস্তা যেখানে ১.৩০ শতাংশ ছিল, সেখানে এখন ৪৩ শতাংশ পাকা করা হয়। প্রতি ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিক, প্রতি গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়, খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা, সবজি উৎপাদন ও সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রামীণ হাট-বাজার ও পাইকারি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতির মাধ্যমে উৎপাদক ও সরবরাহকারীর আয় বৃদ্ধিকে বিবেচনায় রেখে প্রতি ইউনিয়নের সঙ্গে উপজেলার একাধিক সংযোগ পাকা সড়ক ও গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ এবং প্রতি উপজেলার সঙ্গে জেলার একাধিক ২ লেন অথবা ৪ লেনবিশিষ্ট উন্নত পাকা সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। বছরের প্রথম দিনে উৎসবমুখরভাবে সারা দেশের নতুন বই বিতরণ করা হয়। আগামী প্রজন্মকে প্রযুক্তিগত শিক্ষায় তৈরি করতে পারলে উন্নত দেশ গড়া সম্ভব। প্রচুর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ও প্রতিটি মানুষের উচ্চ প্রবৃদ্ধি আয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না হলে উন্নত দেশে গড়া সম্ভব নয়।

তাই তিনি সকল সেক্টরের ব্যবসায়ীদেরকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে উৎসাহিত করে প্রচুর শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সমস্যা সমাধানের জন্য মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, দেশের অভ্যন্তরীণ গ্যাসের স্বল্পতার বিকল্প হিসাবে LNG টার্মিনাল স্থাপনের মাধ্যমে গ্যাসের চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা, বন্দর ব্যবস্থা বহুমুখী করার জন্য মোংলা বন্দরকে সচল করা, মাতারবাড়ী ও পায়রা নতুন বন্দর চালু ও চট্টগ্রাম বন্দরকে আধুনিকীকরণের ব্যবস্থা করেন। উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য পূরণের জন্য চট্টগ্রাম একটি মাত্র বন্দর ও দেশের সব অঞ্চলের চাহিদা পূরণের জন্য অবাস্তব। দীর্ঘমেয়াদি উচ্চ প্রবৃদ্ধি পরিকল্পনার অংশ হিসাবে পারমাণবিক বিদ্যুৎসহ অসংখ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, দেশের সকল অংশের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত এবং ব্যয় ও সময় সাশ্রয়ী করার জন্য পদ্মা সেতু, যমুনা নদীর উপর ডাবল নতুন রেল ব্রিজসহ অসংখ্য ব্রিজ নির্মাণ করা হয়, যাতে দেশের সকল অঞ্চলে শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে টানেল স্থাপন করা হয় এই লক্ষ্যে, যেন মিরসরাইয়ের বিশাল শিল্প অঞ্চল থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রায় ২৫০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ করলে দেশে বৃহৎ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বড় পর্যটন খাত উন্মোচিত হবে। এরকম হাজারো উন্নয়ন কর্মসূচি যেমন নেওয়া হয়েছে এবং চলমান আছে, তেমনি শেখ হাসিনার উদ্ভাবনী চিন্তা ও ডেলটা পরিকল্পনার অংশ হিসাবে উপকূলীয় এলাকা সহ সারাদেশে হাজার হাজার বহুতলবিশিষ্ট প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেন। যে কারণে প্রতিবছর যেখানে জলোচ্ছ্বাসে হাজার/লক্ষ মানুষ মারা যেত, এখন গত ৫ বছরে ১০০ জনও অনুরূপ দুর্ঘটনায় হতাহত হয়নি এবং পানি চলে যাওয়ার সাথে সাথে ঐ সমস্ত লোকালয়ে আয়-রোজগারের ব্যবস্থা ও স্বাভাবিক জীবন-যাপনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তাঁর এই জন্মদিনে শুধু এইটুকু বলব—তাঁকে বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির দূত হিসাবে আল্লাহ প্রেরণ করেছেন বলে আমার বিশ্বাস। শেখ হাসিনার ক্ষমতামেয়াদের হাজারও অর্জনের মধ্যে অর্থনীতির কয়েকটি তথ্য তুলে ধরতে চাই।

২০০৮ সনে মাথাপিছু আয় ভারত, পাকিস্তান, নেপালের নিচে ছিল, যা ছিল ৬৩০ ডলার, আর ২০২৪ সনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কারণে ভারত, পাকিস্তান, নেপালকে পিছনে ফেলে উন্নীত হয় ২৮২৪ ডলারে। ২০০৮ সনে বাংলাদেশের জিডিপি (GDP) ছিল ৯৩ বিলিয়ন ডলার, আর ২০২৪ সনে তা হয় ৪৫১.৮৭ বিলিয়ন ডলার। ২০০৮ সনে বাংলাদেশের ব্যাংকের রিজার্ভ ছিল ৫.৩০ বিলিয়ন ডলার, আর ২০২৪ সনে তা হয়েছে ২৬ বিলিয়ন ডলারের উপরে।

তাঁর শাসনামলের কারণে দেশ উন্নয়নশীল ও আত্মপ্রত্যয়ী জাতিতে রূপান্তরিত হয়েছে। কিন্তু পরাশক্তি ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের কারণে বাংলাদেশ আজ দিশেহারা এবং প্রতিদিন ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষ আজ তাঁর পুনরায় ক্ষমতায়নের জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছেন এবং প্রার্থনা করছে শতায়ু জীবনের জন্য।
মতামত লিখুন:
https://www.darktohope.org/ad/1731844310_left-banner.gif

সর্বশেষ সংবাদ

সায়েন্সল্যাবে ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ
শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে অচল চট্টগ্রাম বন্দর
শাহজালালে অগ্নিকাণ্ডের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কমিটি গঠন
দক্ষিণ কোরিয়া ও চীন সফরে গেছেন বিমান বাহিনী প্রধান
বিতর্কিত কেউ আগামী নির্বাচনী দায়িত্বে থাকবেন না: ইসি আনোয়ারুল
মতামত- এর আরো খবর
Email: [email protected]
© 2024 Dark to Hope
🔝