ছবিটি খুবই পরিচিত। ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর দুইতলা বাড়ির সামনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর চিরাচরিত ভঙ্গিতে জনতার উদ্দেশ্যে হাত তুলে কোনো বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন, আর বাড়ির বারান্দায় রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছেন এক তরুণী। তিনি আর কেউ নন, আজকের প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংগ্রামী সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৪৭ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের জ্যেষ্ঠ কন্যা তিনি। বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা তাঁকে আদর করে 'হাসু' বলে ডাকতেন। পারিবারিক গভীর বন্ধনে আনন্দঘন পরিবেশে তাঁর বেড়ে ওঠা। এই অকুতোভয় মহীয়সী নারী জননেত্রী শেখ হাসিনা ৭০ বছর বয়সে পদার্পণ করেছেন।
পাকিস্তানি দোসরদের কারাগার থেকে বের করে মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী বানানো হয়। কিন্তু ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত আর ২ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই বাংলাদেশ। এই বাক্য তো শুধু বক্তব্য আর বিবৃতি দেওয়ার জন্য নয়। চেতনার শক্তিতে বাস্তবে অর্জিত স্বাধীনতা ফলপ্রসূ করার জন্য শেখ হাসিনার আদর্শিক রাজনীতি। তাই ১৯৮১ সালের ১৭ই মে এক নতুন অধ্যায়ের শুরু হলো। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হলেন বাঙালি জাতি। বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষার ভরসার প্রতীক শেখ হাসিনা। তাঁর বিপরীতে যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, মানুষের অধিকারে বিশ্বাস করে না, অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চায় না, সেই অপশক্তির কুপানলে পড়েন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হন তিনি। তাঁর ওপর ১৯ বার হামলা করা হয়। সর্বশেষ ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা ছিল শেখ হাসিনাকে হত্যার পৈশাচিক দৃষ্টান্ত, যা রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত কলঙ্কিত এক অধ্যায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর কন্যা এগিয়ে যাচ্ছেন। আর এই এগিয়ে যাওয়ার পথে সকল চ্যালেঞ্জ গ্রহণে বাংলার আপামর জনসাধারণ তাঁকে শক্তি জুগিয়ে চলেছে। ৭০ বছর বয়সেও জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর প্রতিটি মুহূর্ত বাংলাদেশের মানুষের উন্নয়নের কাজে নিয়োজিত। বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ৫০ লক্ষ মানুষের কাছে ১০ টাকা দরে ৩০ কেজি চাল তুলে দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। একসময়ের মঙ্গাপীড়িত এলাকা কুড়িগ্রামের বাসিন্দাদের জুলেখা হাসি মাখা মুখে বলেন, 'শেখের বেটি ১০ টাকা দরে আমাদের চাল দিতেছে।' ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে ৩০ পদের ওষুধ পাঠানো হচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণের দোরগোড়ায়। মাতৃমৃত্যু হার, শিশুমৃত্যু হার কমানোর পাশাপাশি গৃহহীন মানুষ সরকারিভাবে ঘর পাচ্ছে। কর্মহীন মানুষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেরাই কর্মসংস্থান করছে। অসম শিক্ষানীতির পরিবর্তে সকলের জন্য সর্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থার আওতায় গত ৮ বছর ধরে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে নতুন বই তুলে দেওয়া হচ্ছে। সরকারের কর্মকাণ্ডের বহুমুখী উন্নয়নে বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় ৪৬৬ মার্কিন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। ৭০ শতাংশ মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় নিয়ে এসেছে সরকার। স্কুল-কলেজ, রাস্তাঘাট, পদ্মা সেতুর মতো বিশাল সেতু নির্মাণ করে এক আস্থাশীল, আশাবাদী নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন শেখ হাসিনা। জননেত্রীর সেবা থেকে কেউ বাদ পড়েন না।
সব্যসাচী অসুস্থ কবি সৈয়দ শামসুল হককে দেখতে তিনি হাসপাতালে ছুটে যান। ঠিক তেমনিভাবে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েও পায়রা নদীর কূল ঘেঁষা চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শীর্ষেন্দুর ডাকযোগে প্রেরিত পত্রের উত্তর দিতে তিনি ভুল করেননি। তিনি আশ্বাস দিয়ে শীর্ষেন্দুকে লেখেন, পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মিত হবে। এভাবেই ব্যক্তি শেখ হাসিনা, রাজনৈতিক শেখ হাসিনা, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা, সর্বোপরি বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা এগিয়ে চলেছেন। শুধু আওয়ামী লীগের নেত্রী হয়ে নয়, সারা দেশের, সারা বিশ্বের নেত্রী হিসেবে। নন্দিত শেখ হাসিনা এগিয়ে যাচ্ছেন, তাঁর যাত্রাপথে পথ হারানোর শত ভয়কে অতিক্রম করে, প্রলোভন-বিভীষিকার প্রতারণার রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে পদদলিত করে, সুন্দর পৃথিবীতে একটি উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায়। জয় হোক জননেত্রী শেখ হাসিনার। তিনি দীর্ঘজীবী হোন। লাল-সবুজের নিশানা হাতে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করুন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে বাঙালি জাতিকে আইনের সুশাসন, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা, সকল নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করা সহ বাংলাদেশে হাজার হাজার উন্নয়নমূলক দৃশ্যমান কাজ করেছেন। এমন কোনো জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড নেই যেখানে শেখ হাসিনার উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার ষড়যন্ত্র করে হত্যাযজ্ঞের আয়োজন করে শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিনের সহায়তায় ও মানুষের দোয়ায় তিনি বেঁচে গেছেন। তিনি অনেক কোটি মানুষের হৃদয়ের নেত্রী। আজকে সৎকারের নামে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরোধী দলের মদদ প্রকাশ দমন করার জন্য মিথ্যা মামলা দিয়ে নিরপরাধ হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হয়রানি করা হচ্ছে। এই সংস্কৃতি বাঙালি জাতি কখনো দেখেনি। আমাদের স্বাধীন সোনার বাংলাদেশ সাময়িক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে। কিন্তু বাঙালি জাতি বীরের জাতি। তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাংস্কৃতিক সবকিছু ফিরে পাবে। ষড়যন্ত্রকারীরা বেশিদিন টিকতে পারে না। ষড়যন্ত্র করে তাদের সঠিক চরিত্র জাতির কাছে উন্মোচিত হয়ে যায়। আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক ভুল-ত্রুটি আছে। এখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে, আত্মসমালোচনা করতে হবে। স্বজনপ্রীতি বাদ দিতে হবে, দলের নির্যাতিত কর্মীদের সঠিক মূল্যায়ন করতে হবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আছে, থাকবে জনগণের পাশে, জনগণের অধিকার আদায়ের নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রের ও দেশের স্বার্থে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে কথা বলবে। মিথ্যা মামলা হামলা দিয়ে কখনো থামিয়ে রাখা যাবে না দেশপ্রেমিক মহান মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকদেরকে। ঘুমিয়ে থেকো না বাঙালি, এখনই উপযুক্ত সময় এসে গেছে রুখে দাঁড়াও, স্বাধীন সোনার বাংলাদেশকে হায়েনার হাত থেকে রক্ষা করো। আমার দেশ, তোমার দেশ, স্বাধীন বাংলাদেশ স্বাধীন করো।"